অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ও ভাতা প্রসঙ্গে এত জ্বলন কেন? মোকতেল হোসেন মুক্তি
“সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি”-
former secretary Nazrul Islam khan N I Khan নামেই বেশী পরিচিত। সাবেক এই সচিব মহান মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ৪ নেতাদের নিয়ে অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখা লিখেছেন। মনে প্রাণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির একজন তুখোড় লেখক সমালোচক এবং গবেষক । তিনি উচ্চ শিক্ষিত বিধায় তাঁকে নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কিন্তু একটি বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না যে তিনি কেন হঠাত করে মূর্খ গরীব অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের একান্ত প্রাপ্য জাতীয় মর্যাদা ও সন্মানাদি প্রসঙ্গে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং বিরুপ কঠোর সমালোচনামূলক বিতর্কের সৃষ্টি করলেন? একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও আমার সন্তান আমি বিদেশে নিজের কষ্টার্জিত অর্থেই লেখা পড়া করিয়েছি। নিজে যা'পারিনি তা' সন্তানদের পুরন করার এই যে মহান প্রত্যয় ও প্রত্যাশা তা' বাস্তবায়ন করা অতি হত দরিদ্র্য নিভৃত পল্লীর অখ্যাত অজ্ঞাত অশিক্ষিত একজন বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আদৌ সম্ভব নয়। ১। মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধকালীন আমার কমান্ডার New Zealand প্রবাসী Hanif Mahmud নিজেও উচ্চ শিক্ষিত এবং তাঁর সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ২। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী সেক্টর কমান্ডারগণ/ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক/ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলী/নৌ পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খানসহ আরো অগনিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা অথবা তাদের সন্তানেরা কি অশিক্ষিত? অন্যান্য বিত্তশালী উচ্চ শিক্ষিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী/শিল্পী/সাহিত্যিকগীতিকার/সুরকার/সচিব/কবি/লেখক/ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারদের কথা না হয় উল্লেখ নাই করলাম। যাদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে এই বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার কোটা প্রয়োজন নেই। তাই তাঁরা এ সব নিয়ে কখনো মাথায় ঘামাননি বা বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কোন মিডিয়া বা পত্র/পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়নি। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা এই হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ে অবহেলা অবজ্ঞা দীনহীন মানবেতর জীবন যাপন করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়নের লক্ষ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা/কোটা ইত্যাদিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যথা গ্যাস বিল পানি বিল বিদ্যুৎ বিল সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স-আয়কর কিছুটা কমিয়ে সহজতর করার চেষ্টা করেছেন। যদিও এরই মধ্যে বিগত জামাত বি এন পি সরকারের অশুভ কর্ম পরিধি মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করেছে। তালিকায় নাম এসেছে ৪ বছরের দুধের শিশুর। বিধায় আসল মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই নাম আজো তালিকাভুক্ত হয়নি। যে সমস্যা নিয়ে আমরা অনেকেই হা হুতাশ এবং বর্তমান সরকারের মন্ত্রী নেতা ও কমান্ডারদের কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছি। অন্যদিকে অমুক্তিযোদ্ধা হাতিয়ে নিচ্ছে শেখ হাসিনার দেয়া সকল সুযোগ সুবিধাদি। "সকলের জন্য ধান, সকলের জন্য চাল, সকলের জন্য পানি, সকলের জন্য ভূমি, শিক্ষা, সকলের জন্য অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, সকলের জন্য আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুসমবন্টন, সকলের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল, সকলের জন্য একটি সুখি সাচ্ছন্দ জীবন ব্যবস্থার জন্যই জাতিরজনকের আজীবন সংগ্রাম এই মহান "স্বাধীনতা"। সাড়ে সাত কোটি থেকে আজ আমরা ১৬ কোটি ৩৫ লক্ষে পৌছে গিয়েও সমাধান করা সম্ভব হয়নি হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা। এর মূল কারন ১৯৭৫ সালে জাতিরজনক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং পাকিস্তান আই এস আই'র পা'চাটা কুকুর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ফলে হারিয়ে গিয়েছে আসল মুক্তিযোদ্ধারা এবং দেশপ্রেমিক সোনার মানুষগুলো। "৭৫ পরবর্তী এমনও পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে যে ভয়ে অনেকেই স্বীকার করেনি যে আমি মুক্তিযোদ্ধা" বা আওয়ামী লীগ সমর্থনকারী । কি ভয়াবহ ছিল বাঙ্গালী জাতির ২১টি বছর! ভাবতে গেলে গা'শিউরে ওঠে! লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে স্বাধীনতা বিরোধী আল বদর আল শামস আল-রাজাকারের কোন সন্তান অশিক্ষিত নয় এবং দারিদ্র্যসীমার নীচে জীবন প্রবাহ অতিবাহিত করে না। ভাগ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় " একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর একটি সেমিনারে উল্লেখ করেছিলেন " মহান স্বাধীনতায় বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করলেও স্বাধীনতার সুফল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ঘরে পৌছায় নি" কথাগুলো একটি ছোট মানুষের হলেও বিশাল এবং ব্যাপক অর্থে মহা দর্শনের চেয়েও অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়ের সে বক্তব্য। অতি সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জনৈক মুনতাসীর মামুন স্যার এবং শাহরিয়ার কবীর (যিনি জীবনে তাঁর কোন লেখায় বঙ্গবন্ধুকে জাতিরজনক বলে স্বীকার করেন নি বা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন লেখা প্রবন্ধ গল্প কাহিনী কখনো লিখেন নি কিন্তু তিনি রাজাকারের ফাসি চেয়েছেন) এই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন এবং পরবর্তীতে নেত্রীর পরোক্ষ ধমক অর্থাৎ সান্টিং খেয়েই দালাল নির্মূল কমিটির দালালগণ থেমে গিয়েছিলেন। মুনতাসীর মামুন সাহেব আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পয়সায় ইতোমধ্যে পবিত্র হজ্বব্রতটিও বীনা পয়সায় সেরে নিয়েছেন। যাক সে কথা লিখছিলাম। একটি বিষয় আমি ৭১ থেকে এ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ করে এসেছি এবং হিসাব মিলিয়েও দেখেছি যে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান স্যারের কথার মধ্যে কিছুটা সত্যতা খুজে পেলেও এই ভাতা ও কোটার বিরুদ্ধে তাঁর মত বিচক্ষন ব্যক্তি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্ব উচ্চ ডিগ্রিধারী একজন পণ্ডিত ব্যক্তির বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি সমর্থকের কলামে/ভাষায়/লেখায়/বলায়/ তর্কে /বিতর্কে বিরোধীতা কেমন যেনো বেমানান এবং অশালীনতার মতই গা'জ্বালাময় বক্তব্য। আমি তাঁকে চিনি এবং জানি। তিনি মনে প্রাণেই জাতিরজনকের একান্ত ভক্ত অনুসারী । কিন্তু এই হতভাগা দীনহীন অশিক্ষিত হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ের সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের "অশিক্ষিত বা মূর্খ" শব্দটি ব্যবহার করে সর্বনাশ করে দিলেন! আমি হতবাক নজরুল স্যার! আপনার মত ব্যক্তির মূখে মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের মত বস্তাপচা সস্তা হাত তালির প্রত্যাশায় এহেন বক্তব্য নিদারুণ বেদনাদায়ক এবং অসহনীয়। আমার গ্রামে আব্দুর রহিম সরদার নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা। যার সন্তান এস এস সি পরীক্ষা দেবার ফি না দিতে পারার কারনে ঘরে বসে কাদতে ছিলেন। তারপরে যেভাবেই হোক অন্য কেউ ব্যবস্থা করেছিল। আজ যদি এই হত দরিদ্র্য আব্দুর রহিম সরদারের অর্থ থাকত তাহলে ইউনুক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলি স্যারের মতই এই রহিমের ছেলেও আমেরিকান ইন্টারন্যাসনাল স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে নিউ ইয়র্কে লেখা পড়া করত এবং মাসের ঐ ১০ হাজার টাকা ভিক্ষা এবং ছেলেকে ভর্তি ফি না দিতে পারার যন্ত্রণায় কাতরাতে হতনা। কাজেই এই হত দরিদ্র্য রহিমের ছেলে যেভাবেই হোক পাস করে একটি চাকুরী নিতে যাবে। ১০০ মার্কের মধ্যে যদি সে ৮০ থেকে ৯০ ও প্রাপ্ত হয় তার চাকুরী হবে না। কেন জানেন? কারন একটি সরকারী চাকুরী নিতে গোটা দেশে এখন হাইব্রীড কাউয়া ফার্মের মূরগীর দালালদের নিকট প্রথমে দৌড়াতে হবে। তারপরে চুক্তি হবে দালালের সাথে। কত লাখ দিতে পারবেন? না না তা' হবে না, কারন মন্ত্রী সাহেবকেই দিতে হবে ৫ লাখ। তারপরে ওমক নেতাকে দিতে হবে এবং এর মধ্য থেকেই আমার % রাখতে হবে। এখন আসুন আসল কথায় আমার গ্রাম দক্ষিন আকাল বরিশ ঐ যে হতভাগা বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম সরদারের ছেলে গল্প বলছিলাম-সে আব্দুর রহিম সরদার ওর বাপ দাদা ১৪ গুষ্ঠির সকল ঘর বাড়ী সহায় সম্বল কম্বল বিক্রয় করলেও ২ লাখ টাকার বেশী যোগার করতে পারবে না। আমার আত্মীয় আমার সহপাঠী, সহযোদ্ধা বন্ধু, আমি তার একান্তজন হিসেবে সবই জানি। সে আমারই এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছিল। তাহলে নজরুল স্যার আপনি যে বললেন সকল % কেটে মাত্র ৫% কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সীমিত রাখতে, বাকীটা কি ঐ সকল আল বদর আল শামস আল রাজাকারের সন্তানের জন্য রাখতে বলছেন? নাকি আপনার ছেলে মেয়ে অথবা মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের ছেলে মেয়েদের জন্য রাখতে বলছেন? তবে স্যার একটা কথা জেনে রাখবেন-মনে রাখবেন " জাতিরজনকের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ও ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লেখ করা উচিত ছিল যে অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে পারবে না - শুধু আপনাদের মত মহা জ্ঞানপাপী পন্ডিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী সুদখোড় ইউনুসের মত ধনকুবের লুটেরা, রাজাকার মুসা বীন শমসেরের (লুনা মুসার) মত গোটা বাংলাদেশের খেতে খামারে ব্রিটিশ সরকারের গাঁরা ম্যাকনেট চুরি করে বিক্রয়কারী) মুনতাসীর মামুনের মত দালাল এবং শাহরিয়ার কবীরের মত সুবিধাভোগি চাটুকর তোষামোদকারীরাই মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবে। যেহেতু বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক জেলে তাতী কামার কুমার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কবি শিল্পী সাহিত্যিক লেখক নৌকার মাঝি ইঞ্জিনের ড্রাইভার অথবা রিকশা/ভ্যানগাড়ী চালক/বাসের ড্রাইভার/হেল্পার/ঠিকাদার কারো কথাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেননি। সেহেতু আপনাদের এহেন অবান্তর অহেতুক কোটার বিরোধী তথা হত দরিদ্র্য দীনহীন মজদুর অজো পাড়া গায়ের নিভৃত পলীতে রাত দিন আপনাদের মূখের অন্ন ফলানোর কাজে ব্যস্ত বয়োবৃদ্ধ অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধের "অশিক্ষিত" বলে সম্বোধন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনকের বিদেহী আত্মাকে কষ্ট দেবার চেষ্টা থেকে বিরত হোন। আপনি ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন। আমরাত অশিক্ষিতই; সে দোষ ত আমাদের না স্যার? সে দোষ পশ্চিমা শোষক হায়েনা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লিয়াকত আলী খান আইউব খান টিক্কা খান, মোনায়েম খানদের। “সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি।”- কবির এ মর্মবেদনা অনেক পুরোনো।সেদিনের কবির চেতনায় আগুন ধরেছিল বঙ্গ সন্তানদের চেহারা দেখে। তাই বড় আফসোস করে কবি তার বেদনা দগ্ধ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন কাব্যিক ছন্দে।কিন্তু আজ অনেক চড়াই উৎরাই ঘাত প্রতিঘাত আর উস্থান-পতনের মাধ্যমে স্বাধীনতার এতো বছর পরেও বাঙ্গালীর জাতির পিতা নিয়ে আমরা নষ্ট খেলা,ইতিহাস নিয়ে টানাটানি এবং অপবাদ নিয়ে মেতে আছি। আমরা আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে, সংশয় এবং মানা না মানার মধ্যে দিয়ে যে নষ্ট খেলায় মেতে আছি তা শুধু আমাদের জন্য অপমান জনক না বরং তা আমাদের বিশ্বের মানচিত্রে অতি নগ্ন হিসাবেই পরিচিত লাভ করাতে দ্বিগুন সাহায্য করে। ঠিক তেমনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নে এবং ভাতা ও কোটা নিয়েও আপনারা আজ জাতিরজনক নেই বলেই টানা হেচড়া করে সন্মানের বদলে অসন্মান করছেন। তাহলে আমাদের ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ডেকে কেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে অস্ত্র জমাদানের প্রাক্কালে জীবন প্রদ্বীপ নিভিয়ে দিলেন না?
former secretary Nazrul Islam khan N I Khan নামেই বেশী পরিচিত। সাবেক এই সচিব মহান মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ৪ নেতাদের নিয়ে অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখা লিখেছেন। মনে প্রাণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির একজন তুখোড় লেখক সমালোচক এবং গবেষক । তিনি উচ্চ শিক্ষিত বিধায় তাঁকে নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কিন্তু একটি বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না যে তিনি কেন হঠাত করে মূর্খ গরীব অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের একান্ত প্রাপ্য জাতীয় মর্যাদা ও সন্মানাদি প্রসঙ্গে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং বিরুপ কঠোর সমালোচনামূলক বিতর্কের সৃষ্টি করলেন? একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও আমার সন্তান আমি বিদেশে নিজের কষ্টার্জিত অর্থেই লেখা পড়া করিয়েছি। নিজে যা'পারিনি তা' সন্তানদের পুরন করার এই যে মহান প্রত্যয় ও প্রত্যাশা তা' বাস্তবায়ন করা অতি হত দরিদ্র্য নিভৃত পল্লীর অখ্যাত অজ্ঞাত অশিক্ষিত একজন বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আদৌ সম্ভব নয়। ১। মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধকালীন আমার কমান্ডার New Zealand প্রবাসী Hanif Mahmud নিজেও উচ্চ শিক্ষিত এবং তাঁর সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ২। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী সেক্টর কমান্ডারগণ/ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক/ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলী/নৌ পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খানসহ আরো অগনিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা অথবা তাদের সন্তানেরা কি অশিক্ষিত? অন্যান্য বিত্তশালী উচ্চ শিক্ষিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী/শিল্পী/সাহিত্যিকগীতিকার/সুরকার/সচিব/কবি/লেখক/ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারদের কথা না হয় উল্লেখ নাই করলাম। যাদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে এই বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার কোটা প্রয়োজন নেই। তাই তাঁরা এ সব নিয়ে কখনো মাথায় ঘামাননি বা বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কোন মিডিয়া বা পত্র/পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়নি। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা এই হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ে অবহেলা অবজ্ঞা দীনহীন মানবেতর জীবন যাপন করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়নের লক্ষ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা/কোটা ইত্যাদিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যথা গ্যাস বিল পানি বিল বিদ্যুৎ বিল সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স-আয়কর কিছুটা কমিয়ে সহজতর করার চেষ্টা করেছেন। যদিও এরই মধ্যে বিগত জামাত বি এন পি সরকারের অশুভ কর্ম পরিধি মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করেছে। তালিকায় নাম এসেছে ৪ বছরের দুধের শিশুর। বিধায় আসল মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই নাম আজো তালিকাভুক্ত হয়নি। যে সমস্যা নিয়ে আমরা অনেকেই হা হুতাশ এবং বর্তমান সরকারের মন্ত্রী নেতা ও কমান্ডারদের কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছি। অন্যদিকে অমুক্তিযোদ্ধা হাতিয়ে নিচ্ছে শেখ হাসিনার দেয়া সকল সুযোগ সুবিধাদি। "সকলের জন্য ধান, সকলের জন্য চাল, সকলের জন্য পানি, সকলের জন্য ভূমি, শিক্ষা, সকলের জন্য অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, সকলের জন্য আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুসমবন্টন, সকলের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল, সকলের জন্য একটি সুখি সাচ্ছন্দ জীবন ব্যবস্থার জন্যই জাতিরজনকের আজীবন সংগ্রাম এই মহান "স্বাধীনতা"। সাড়ে সাত কোটি থেকে আজ আমরা ১৬ কোটি ৩৫ লক্ষে পৌছে গিয়েও সমাধান করা সম্ভব হয়নি হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা। এর মূল কারন ১৯৭৫ সালে জাতিরজনক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং পাকিস্তান আই এস আই'র পা'চাটা কুকুর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ফলে হারিয়ে গিয়েছে আসল মুক্তিযোদ্ধারা এবং দেশপ্রেমিক সোনার মানুষগুলো। "৭৫ পরবর্তী এমনও পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে যে ভয়ে অনেকেই স্বীকার করেনি যে আমি মুক্তিযোদ্ধা" বা আওয়ামী লীগ সমর্থনকারী । কি ভয়াবহ ছিল বাঙ্গালী জাতির ২১টি বছর! ভাবতে গেলে গা'শিউরে ওঠে! লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে স্বাধীনতা বিরোধী আল বদর আল শামস আল-রাজাকারের কোন সন্তান অশিক্ষিত নয় এবং দারিদ্র্যসীমার নীচে জীবন প্রবাহ অতিবাহিত করে না। ভাগ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় " একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর একটি সেমিনারে উল্লেখ করেছিলেন " মহান স্বাধীনতায় বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করলেও স্বাধীনতার সুফল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ঘরে পৌছায় নি" কথাগুলো একটি ছোট মানুষের হলেও বিশাল এবং ব্যাপক অর্থে মহা দর্শনের চেয়েও অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়ের সে বক্তব্য। অতি সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জনৈক মুনতাসীর মামুন স্যার এবং শাহরিয়ার কবীর (যিনি জীবনে তাঁর কোন লেখায় বঙ্গবন্ধুকে জাতিরজনক বলে স্বীকার করেন নি বা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন লেখা প্রবন্ধ গল্প কাহিনী কখনো লিখেন নি কিন্তু তিনি রাজাকারের ফাসি চেয়েছেন) এই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন এবং পরবর্তীতে নেত্রীর পরোক্ষ ধমক অর্থাৎ সান্টিং খেয়েই দালাল নির্মূল কমিটির দালালগণ থেমে গিয়েছিলেন। মুনতাসীর মামুন সাহেব আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পয়সায় ইতোমধ্যে পবিত্র হজ্বব্রতটিও বীনা পয়সায় সেরে নিয়েছেন। যাক সে কথা লিখছিলাম। একটি বিষয় আমি ৭১ থেকে এ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ করে এসেছি এবং হিসাব মিলিয়েও দেখেছি যে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান স্যারের কথার মধ্যে কিছুটা সত্যতা খুজে পেলেও এই ভাতা ও কোটার বিরুদ্ধে তাঁর মত বিচক্ষন ব্যক্তি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্ব উচ্চ ডিগ্রিধারী একজন পণ্ডিত ব্যক্তির বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি সমর্থকের কলামে/ভাষায়/লেখায়/বলায়/ তর্কে /বিতর্কে বিরোধীতা কেমন যেনো বেমানান এবং অশালীনতার মতই গা'জ্বালাময় বক্তব্য। আমি তাঁকে চিনি এবং জানি। তিনি মনে প্রাণেই জাতিরজনকের একান্ত ভক্ত অনুসারী । কিন্তু এই হতভাগা দীনহীন অশিক্ষিত হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ের সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের "অশিক্ষিত বা মূর্খ" শব্দটি ব্যবহার করে সর্বনাশ করে দিলেন! আমি হতবাক নজরুল স্যার! আপনার মত ব্যক্তির মূখে মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের মত বস্তাপচা সস্তা হাত তালির প্রত্যাশায় এহেন বক্তব্য নিদারুণ বেদনাদায়ক এবং অসহনীয়। আমার গ্রামে আব্দুর রহিম সরদার নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা। যার সন্তান এস এস সি পরীক্ষা দেবার ফি না দিতে পারার কারনে ঘরে বসে কাদতে ছিলেন। তারপরে যেভাবেই হোক অন্য কেউ ব্যবস্থা করেছিল। আজ যদি এই হত দরিদ্র্য আব্দুর রহিম সরদারের অর্থ থাকত তাহলে ইউনুক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলি স্যারের মতই এই রহিমের ছেলেও আমেরিকান ইন্টারন্যাসনাল স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে নিউ ইয়র্কে লেখা পড়া করত এবং মাসের ঐ ১০ হাজার টাকা ভিক্ষা এবং ছেলেকে ভর্তি ফি না দিতে পারার যন্ত্রণায় কাতরাতে হতনা। কাজেই এই হত দরিদ্র্য রহিমের ছেলে যেভাবেই হোক পাস করে একটি চাকুরী নিতে যাবে। ১০০ মার্কের মধ্যে যদি সে ৮০ থেকে ৯০ ও প্রাপ্ত হয় তার চাকুরী হবে না। কেন জানেন? কারন একটি সরকারী চাকুরী নিতে গোটা দেশে এখন হাইব্রীড কাউয়া ফার্মের মূরগীর দালালদের নিকট প্রথমে দৌড়াতে হবে। তারপরে চুক্তি হবে দালালের সাথে। কত লাখ দিতে পারবেন? না না তা' হবে না, কারন মন্ত্রী সাহেবকেই দিতে হবে ৫ লাখ। তারপরে ওমক নেতাকে দিতে হবে এবং এর মধ্য থেকেই আমার % রাখতে হবে। এখন আসুন আসল কথায় আমার গ্রাম দক্ষিন আকাল বরিশ ঐ যে হতভাগা বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম সরদারের ছেলে গল্প বলছিলাম-সে আব্দুর রহিম সরদার ওর বাপ দাদা ১৪ গুষ্ঠির সকল ঘর বাড়ী সহায় সম্বল কম্বল বিক্রয় করলেও ২ লাখ টাকার বেশী যোগার করতে পারবে না। আমার আত্মীয় আমার সহপাঠী, সহযোদ্ধা বন্ধু, আমি তার একান্তজন হিসেবে সবই জানি। সে আমারই এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছিল। তাহলে নজরুল স্যার আপনি যে বললেন সকল % কেটে মাত্র ৫% কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সীমিত রাখতে, বাকীটা কি ঐ সকল আল বদর আল শামস আল রাজাকারের সন্তানের জন্য রাখতে বলছেন? নাকি আপনার ছেলে মেয়ে অথবা মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের ছেলে মেয়েদের জন্য রাখতে বলছেন? তবে স্যার একটা কথা জেনে রাখবেন-মনে রাখবেন " জাতিরজনকের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ও ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লেখ করা উচিত ছিল যে অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে পারবে না - শুধু আপনাদের মত মহা জ্ঞানপাপী পন্ডিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী সুদখোড় ইউনুসের মত ধনকুবের লুটেরা, রাজাকার মুসা বীন শমসেরের (লুনা মুসার) মত গোটা বাংলাদেশের খেতে খামারে ব্রিটিশ সরকারের গাঁরা ম্যাকনেট চুরি করে বিক্রয়কারী) মুনতাসীর মামুনের মত দালাল এবং শাহরিয়ার কবীরের মত সুবিধাভোগি চাটুকর তোষামোদকারীরাই মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবে। যেহেতু বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক জেলে তাতী কামার কুমার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কবি শিল্পী সাহিত্যিক লেখক নৌকার মাঝি ইঞ্জিনের ড্রাইভার অথবা রিকশা/ভ্যানগাড়ী চালক/বাসের ড্রাইভার/হেল্পার/ঠিকাদার কারো কথাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেননি। সেহেতু আপনাদের এহেন অবান্তর অহেতুক কোটার বিরোধী তথা হত দরিদ্র্য দীনহীন মজদুর অজো পাড়া গায়ের নিভৃত পলীতে রাত দিন আপনাদের মূখের অন্ন ফলানোর কাজে ব্যস্ত বয়োবৃদ্ধ অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধের "অশিক্ষিত" বলে সম্বোধন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনকের বিদেহী আত্মাকে কষ্ট দেবার চেষ্টা থেকে বিরত হোন। আপনি ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন। আমরাত অশিক্ষিতই; সে দোষ ত আমাদের না স্যার? সে দোষ পশ্চিমা শোষক হায়েনা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লিয়াকত আলী খান আইউব খান টিক্কা খান, মোনায়েম খানদের। “সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি।”- কবির এ মর্মবেদনা অনেক পুরোনো।সেদিনের কবির চেতনায় আগুন ধরেছিল বঙ্গ সন্তানদের চেহারা দেখে। তাই বড় আফসোস করে কবি তার বেদনা দগ্ধ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন কাব্যিক ছন্দে।কিন্তু আজ অনেক চড়াই উৎরাই ঘাত প্রতিঘাত আর উস্থান-পতনের মাধ্যমে স্বাধীনতার এতো বছর পরেও বাঙ্গালীর জাতির পিতা নিয়ে আমরা নষ্ট খেলা,ইতিহাস নিয়ে টানাটানি এবং অপবাদ নিয়ে মেতে আছি। আমরা আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে, সংশয় এবং মানা না মানার মধ্যে দিয়ে যে নষ্ট খেলায় মেতে আছি তা শুধু আমাদের জন্য অপমান জনক না বরং তা আমাদের বিশ্বের মানচিত্রে অতি নগ্ন হিসাবেই পরিচিত লাভ করাতে দ্বিগুন সাহায্য করে। ঠিক তেমনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নে এবং ভাতা ও কোটা নিয়েও আপনারা আজ জাতিরজনক নেই বলেই টানা হেচড়া করে সন্মানের বদলে অসন্মান করছেন। তাহলে আমাদের ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ডেকে কেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে অস্ত্র জমাদানের প্রাক্কালে জীবন প্রদ্বীপ নিভিয়ে দিলেন না?