Friday, September 28, 2018
Sunday, August 5, 2018
প্রোপ্যাগান্ডা নাম্বার ২-
প্রোপ্যাগান্ডা নাম্বার ২-
শেখ কামাল, মেজর ডালিমের বৌ অপহরনকারী’ দুশ্চরিত্র, লম্পট…
সুলতানা খুকু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার পরিচিতি ছিল এক প্রতিভাবান অ্যাথলেট হিসেবে, দেশজোড়া খ্যাতি ছিল তার। হঠাৎ করে একদিন শেখ কামাল আবিস্কার করলেন, শ্যামলা বর্ণের এই ফুটফুটে মিষ্টি মেয়েটাকে তিনি প্রচণ্ড ভালবাসেন। তবে সমস্যাটা হলো, ছোটবেলা থেকে কামাল ডানপিটে স্বভাবের হলেও ভালোবাসার কথা কোনোভাবেই সুলতানাকে জানাতে পারলেন না। বড়ই বিব্রত এবং বিচলিত বোধ করতে লাগলেন এই ঠাণ্ডা স্বভাবের মৃদুভাষী মেয়েটার মুখোমুখি হতে গিয়ে। উপায়ন্তর না দেখে ছোট বোন ডলি জহুরকে গিয়ে ধরলেন শেখ কামাল। অনেক লম্বা আর শক্ত পেটা শরীরের সুলতানাকে দেখে তখন সবাই ভয় পেত, সমীহ করে চলত। তাই ডলি জহুর বহুদিন চেষ্টা করেও সুলতানাকে কামালের ভালোবাসা কথা বলবার মত সাহস জোগাড় করে উঠতে পারলেন না।
এ বিষয়ে চলুন অভিনেত্রী ডলি জহুরের বক্তব্য জেনে আসা যাকঃ
শেখ কামাল আর ডলি জহুর একই নাট্যদলে কাজ করতেন। প্রতিদিন বিকাল থেকে শুরু হতো নাটকের রিহার্সাল- একটানা চলত রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত। রিহার্সাল শেষে ডলি জহুর বাসায় ফিরতেন শেখ কামালের সাথে। কারণ ডলি জহুররা তখন হাতিরপুলে থাকতেন। ডলি জহুরকে বাসায় পৌছে দিয়ে তারপর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাসায় যেতে কামাল।
১৯৭৩-৭৪ সালে ঢাকা শহরে রাত ১০টা মানেই অনেক রাত। রাস্তা একেবারেই ফাঁকা। সেখানে প্রতিদিন কামাল ভাই আমাকে ১১টা-১২টার দিকে বাসায় পৌছে দিতেন। প্রেসিডেন্টের ছেলে হয়েও তার কাছে সবসময় টাকা থাকত না। এ নিয়ে অনেক ক্ষ্যাপাতাম। শুধু আমি না ক্যাম্পাসেও তার বন্ধুরা তাকে এই জন্য ক্ষ্যাপাত। যেদিন কামাল ভাইয়ের কাছে টাকা থাকত না সেদিন রাতে হেঁটে যেতাম। যেদিন টাকা থাকত সেদিন যেতাম রিকশায়। কত রাতের পরে রাত উনার সাথে আমি একা বাসায় ফিরেছি অথচ একবারের জন্যও আমি তাকে আমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাতে দেখিনি। আমি উনার ছোট বোন শেখ রেহানার বান্ধবী ছিলাম। ছেলেরা ছোটবোনের বান্ধবীদের সাথে কতরকম দুষ্টামী করে। উনি কোনদিন তাও করেননি। ভুল করেও বলেননি ডলি তোর হাতটা দে তো ধরি। এক কথায় কামাল ভাই ছিলেন ভাইয়ের মতোই ভাই। শুধু আমি কেন যেসব মেয়েরাই উনার সাথে মিশত সবাই এইকথা স্বীকার করবেন। আর এই দেশের মানুষ তাকে নিয়ে কত রকমের অপপ্রচার চালালো। কামাল ভাই নাকি কার বৌকে তুলে নিয়ে গেছেন হ্যান ত্যান। মানুষ এত মিথ্যাবাদী হয় কি করে আমি ভেবে পাই না! স্বার্থ মানুষকে ভিতর বাহির থেকেই নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া কামাল ভাই ছিলেন প্রেসিডেন্টের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জন্য শত শত মেয়ে পাগল। কখনও কোনদিন আমরা তাকে সেসব মেয়েদের পাল্লায় পরতে দেখিনি। তিনি কি পারতেন না সেসব মেয়েদের সাথে নোংরামী করতে? এখানেই শেষ নয়।
সুলতানা কামালকে ভালবেসে বিয়ে করে ছিলেন কামাল ভাই। সুলতানা আপা ছিলেন নামকরা একজন খেলোয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলার জন্য তিনি এক নামে পরিচিত। অনেক লম্বা আর শক্ত পেটা শরীর। আমরা উনাকে ভয় পেতাম। সহজে কেউ সুলতানা আপার কাছে যেতাম না। ছেলেরাও ভয় পেত তাকে। এড়িয়ে চলত। সেই সুলতানা আপাকে পছন্দ করে বসলেন কামাল ভাই। আর তার হয়ে সুলতানা আপার কাছে এই কথাটা বলার দ্বায়িত্ব দেন আমাকে। আমি তো ভয়েই শেষ। না করে দিলাম। কিন্তু কামাল ভাইয়ের জোরাজোরিতে রাজী হলাম। কথা দিলাম সুলতানা আপাকে জানাব যে কামাল ভাই তাকে পছন্দ করে। কিন্তু দিন যায়, মাস যায় জানানো আর হয় না। কি করে হবে? আমি যত বার সুলতানা আপার কাছে এই কথা বলতে গিয়েছি ততবারই ভয়ে আমার গলা শুকিয়েছে। আমি ভীতু, তেলাপকা দেখে মরে যা এসব কত্ত রকমের কথা শুনালো কামাল ভাই।
অবশেষে নিজেই একদিন সুলতানা আপাকে জানালেন তার মনের কথা। হলেন প্রত্যাখ্যাত। সুলতানা আপা বলে দিলেন প্রেম ট্রেম করতে পারবেন না। এতই যদি ভাল লাগে তবে যেন বাসায় লোক পাঠায়। তাই করে ছিলেন কামাল ভাই।
এবার ভেবে দেখ, যে মানুষ একটা মেয়েকে ভয় পেয়ে তার সামনে দাঁড়াতে পারে না, যে মানুষ তার ভালো বাসার কথা জানাতে আড়াই বছর সময় নেয়, সে মানুষ কি করে অন্যের বউ তুলে নিল ?
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশের মানুষকে শান্ত রাখতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি ঘৃনার জন্ম দিতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়েছে। কামাল ভাইও সেই অপচেষ্টার শিকার। ৫ টাকার বাদাম কিনে যে ছেলে তার ছোট বোন আর তার বান্ধবীদের খুশি করতে পারত না তার নামেই ছড়ানো হয়েছে ব্যাংক লুটের কিচ্ছা কাহিনী। আমার কথা হল কামাল ভাই যদি এত বড়ই লুটেরা হবে তাহলে সেসব টাকা গেল কই? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর বাসায় কিছুই পাওয়া যায় নি। পাওয়া যায়নি উল্লেখ করার মত তেমন কোন ব্যাংক একাউন্ট। তাহলে ব্যাংক লুটের টাকা কোথায় গেল?
শেখ কামাল, মেজর ডালিমের বৌ অপহরনকারী’ দুশ্চরিত্র, লম্পট…
সুলতানা খুকু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার পরিচিতি ছিল এক প্রতিভাবান অ্যাথলেট হিসেবে, দেশজোড়া খ্যাতি ছিল তার। হঠাৎ করে একদিন শেখ কামাল আবিস্কার করলেন, শ্যামলা বর্ণের এই ফুটফুটে মিষ্টি মেয়েটাকে তিনি প্রচণ্ড ভালবাসেন। তবে সমস্যাটা হলো, ছোটবেলা থেকে কামাল ডানপিটে স্বভাবের হলেও ভালোবাসার কথা কোনোভাবেই সুলতানাকে জানাতে পারলেন না। বড়ই বিব্রত এবং বিচলিত বোধ করতে লাগলেন এই ঠাণ্ডা স্বভাবের মৃদুভাষী মেয়েটার মুখোমুখি হতে গিয়ে। উপায়ন্তর না দেখে ছোট বোন ডলি জহুরকে গিয়ে ধরলেন শেখ কামাল। অনেক লম্বা আর শক্ত পেটা শরীরের সুলতানাকে দেখে তখন সবাই ভয় পেত, সমীহ করে চলত। তাই ডলি জহুর বহুদিন চেষ্টা করেও সুলতানাকে কামালের ভালোবাসা কথা বলবার মত সাহস জোগাড় করে উঠতে পারলেন না।
এ বিষয়ে চলুন অভিনেত্রী ডলি জহুরের বক্তব্য জেনে আসা যাকঃ
শেখ কামাল আর ডলি জহুর একই নাট্যদলে কাজ করতেন। প্রতিদিন বিকাল থেকে শুরু হতো নাটকের রিহার্সাল- একটানা চলত রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত। রিহার্সাল শেষে ডলি জহুর বাসায় ফিরতেন শেখ কামালের সাথে। কারণ ডলি জহুররা তখন হাতিরপুলে থাকতেন। ডলি জহুরকে বাসায় পৌছে দিয়ে তারপর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাসায় যেতে কামাল।
১৯৭৩-৭৪ সালে ঢাকা শহরে রাত ১০টা মানেই অনেক রাত। রাস্তা একেবারেই ফাঁকা। সেখানে প্রতিদিন কামাল ভাই আমাকে ১১টা-১২টার দিকে বাসায় পৌছে দিতেন। প্রেসিডেন্টের ছেলে হয়েও তার কাছে সবসময় টাকা থাকত না। এ নিয়ে অনেক ক্ষ্যাপাতাম। শুধু আমি না ক্যাম্পাসেও তার বন্ধুরা তাকে এই জন্য ক্ষ্যাপাত। যেদিন কামাল ভাইয়ের কাছে টাকা থাকত না সেদিন রাতে হেঁটে যেতাম। যেদিন টাকা থাকত সেদিন যেতাম রিকশায়। কত রাতের পরে রাত উনার সাথে আমি একা বাসায় ফিরেছি অথচ একবারের জন্যও আমি তাকে আমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাতে দেখিনি। আমি উনার ছোট বোন শেখ রেহানার বান্ধবী ছিলাম। ছেলেরা ছোটবোনের বান্ধবীদের সাথে কতরকম দুষ্টামী করে। উনি কোনদিন তাও করেননি। ভুল করেও বলেননি ডলি তোর হাতটা দে তো ধরি। এক কথায় কামাল ভাই ছিলেন ভাইয়ের মতোই ভাই। শুধু আমি কেন যেসব মেয়েরাই উনার সাথে মিশত সবাই এইকথা স্বীকার করবেন। আর এই দেশের মানুষ তাকে নিয়ে কত রকমের অপপ্রচার চালালো। কামাল ভাই নাকি কার বৌকে তুলে নিয়ে গেছেন হ্যান ত্যান। মানুষ এত মিথ্যাবাদী হয় কি করে আমি ভেবে পাই না! স্বার্থ মানুষকে ভিতর বাহির থেকেই নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া কামাল ভাই ছিলেন প্রেসিডেন্টের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জন্য শত শত মেয়ে পাগল। কখনও কোনদিন আমরা তাকে সেসব মেয়েদের পাল্লায় পরতে দেখিনি। তিনি কি পারতেন না সেসব মেয়েদের সাথে নোংরামী করতে? এখানেই শেষ নয়।
সুলতানা কামালকে ভালবেসে বিয়ে করে ছিলেন কামাল ভাই। সুলতানা আপা ছিলেন নামকরা একজন খেলোয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলার জন্য তিনি এক নামে পরিচিত। অনেক লম্বা আর শক্ত পেটা শরীর। আমরা উনাকে ভয় পেতাম। সহজে কেউ সুলতানা আপার কাছে যেতাম না। ছেলেরাও ভয় পেত তাকে। এড়িয়ে চলত। সেই সুলতানা আপাকে পছন্দ করে বসলেন কামাল ভাই। আর তার হয়ে সুলতানা আপার কাছে এই কথাটা বলার দ্বায়িত্ব দেন আমাকে। আমি তো ভয়েই শেষ। না করে দিলাম। কিন্তু কামাল ভাইয়ের জোরাজোরিতে রাজী হলাম। কথা দিলাম সুলতানা আপাকে জানাব যে কামাল ভাই তাকে পছন্দ করে। কিন্তু দিন যায়, মাস যায় জানানো আর হয় না। কি করে হবে? আমি যত বার সুলতানা আপার কাছে এই কথা বলতে গিয়েছি ততবারই ভয়ে আমার গলা শুকিয়েছে। আমি ভীতু, তেলাপকা দেখে মরে যা এসব কত্ত রকমের কথা শুনালো কামাল ভাই।
অবশেষে নিজেই একদিন সুলতানা আপাকে জানালেন তার মনের কথা। হলেন প্রত্যাখ্যাত। সুলতানা আপা বলে দিলেন প্রেম ট্রেম করতে পারবেন না। এতই যদি ভাল লাগে তবে যেন বাসায় লোক পাঠায়। তাই করে ছিলেন কামাল ভাই।
এবার ভেবে দেখ, যে মানুষ একটা মেয়েকে ভয় পেয়ে তার সামনে দাঁড়াতে পারে না, যে মানুষ তার ভালো বাসার কথা জানাতে আড়াই বছর সময় নেয়, সে মানুষ কি করে অন্যের বউ তুলে নিল ?
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশের মানুষকে শান্ত রাখতে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি ঘৃনার জন্ম দিতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়েছে। কামাল ভাইও সেই অপচেষ্টার শিকার। ৫ টাকার বাদাম কিনে যে ছেলে তার ছোট বোন আর তার বান্ধবীদের খুশি করতে পারত না তার নামেই ছড়ানো হয়েছে ব্যাংক লুটের কিচ্ছা কাহিনী। আমার কথা হল কামাল ভাই যদি এত বড়ই লুটেরা হবে তাহলে সেসব টাকা গেল কই? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর বাসায় কিছুই পাওয়া যায় নি। পাওয়া যায়নি উল্লেখ করার মত তেমন কোন ব্যাংক একাউন্ট। তাহলে ব্যাংক লুটের টাকা কোথায় গেল?
Sheikh Kamal
ঢাকার শাহীন স্কুল থেকে এস, এস, সি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচ, এস, সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ভর্তি হলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত হল কর্মপরিধি। ছায়ানটের সেতারবাদন বিভাগের মেধাবী ছাত্র শেখ কামাল প্রতিষ্ঠা করলেন ঢাকা থিয়েটার। সুঅভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যঅঙ্গনে সুপরিচিত ছিলেন তিনি। এদিকে খেলাধুলাও কিন্তু চলছে পুরোদমে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বাসিন্দা শেখ কামাল বাস্কেটবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন । বাস্কেটবলে তাঁর দক্ষতা অসামান্য দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার হলের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিল তার থাকাকালীন পুরোটা সময়। এর মাঝে ‘৬৯ সালে পাকিস্তানী জান্তা সরকার রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করল নিকৃষ্টতম ধর্মান্ধতার পরিচয় দিয়ে। কিন্তু শেখ কামালকে কি আর থামানো যায়?
বাঙ্গালী জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার সন্তান তিনি, নেতৃত্বগুণ আর জাতীয়তাবোধের চেতনা তার ধমনীতে জন্ম থেকেই বাই ডিফল্ট সেটআপ করা। তার প্রতিবাদের ভাষা হলো রবীন্দ্র সঙ্গীত, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যেখানে যখনই সুযোগ পেলেন, তখনই বিশ্বকবির গান গেয়ে অসহিংস প্রতিবাদের অসাধারন উদাহরন রাখলেন তিনি। কিন্তু ২৫শে মার্চ ১৯৭১রে পাকিস্তানীরা ছাড়িয়ে গেল সব সীমা। পিতা শেখ মুজিব তখন পাকিস্তানী কারাগারে, পুত্র শেখ কামাল বাঙলা মায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মুক্তিযুদ্ধে।
কামাল বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাকি সদস্যরা পাকিস্তানীদের হাতে গ্রেফতার হবার আগেই। মে মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানী সেনাদের চোখ এড়িয়ে শেখ কামাল, তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য ইলিয়াস চৌধুরী এবং তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হয়ে মুকসুদপুর হয়ে যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর ভারতের বেলুনিয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়ালি প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট হিসেবে শেখ কামালের পাসিং আউট হয়। ১০৫ দিনের ট্রেনিং শেষে এসব তরুণ অফিসাররা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার মুহুর্তে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট ওয়ালির এক ছোট ডায়েরীতে তাদের অটোগ্রাফ দিয়েছেন। ওয়ালি ছিলেন প্রথম কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদেরই একজন। সেখানে শেখ কামালেরও একটা অটোগ্রাফ আছে। তিনি লিখেছিলেন-
“তোমার সফলতা কামনা করছি।”
শেখ কামালুদ্দিন
৯.১০.৭১
৮, থিয়েটার রোড
কলকাতা।
কামাল বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাকি সদস্যরা পাকিস্তানীদের হাতে গ্রেফতার হবার আগেই। মে মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানী সেনাদের চোখ এড়িয়ে শেখ কামাল, তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য ইলিয়াস চৌধুরী এবং তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হয়ে মুকসুদপুর হয়ে যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর ভারতের বেলুনিয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিশিয়ালি প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট হিসেবে শেখ কামালের পাসিং আউট হয়। ১০৫ দিনের ট্রেনিং শেষে এসব তরুণ অফিসাররা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার মুহুর্তে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট ওয়ালির এক ছোট ডায়েরীতে তাদের অটোগ্রাফ দিয়েছেন। ওয়ালি ছিলেন প্রথম কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদেরই একজন। সেখানে শেখ কামালেরও একটা অটোগ্রাফ আছে। তিনি লিখেছিলেন-
“তোমার সফলতা কামনা করছি।”
শেখ কামালুদ্দিন
৯.১০.৭১
৮, থিয়েটার রোড
কলকাতা।
Saturday, April 14, 2018
শুভ নববর্ষ ১৪২৫
শুভ নববর্ষ ১৪২৫ গতকাল আমার ৬৫তম জন্ম দিনে অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী বন্ধু ভাই ভ্রাতা ভগ্নি ফেসবুক টুইটর ইয়াহু ওয়ার্ডপ্রেস লিংকড ইনষ্টগ্রাম গুগল ফ্লিকারে শুভেচ্ছা দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ প্রদান করা সম্ভব ছিল না। সবাই ভালো থাকুন, সবাই সুস্থ্য থাকুন, সুন্দর থাকুন, সকলের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটুক আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধব মা বাবাকে নইয়ে নিশ্চিন্তে নিরুদ্বেগে শান্তিতে সুখে সমৃদ্ধিতে। সকলের জীবনের সকল কষ্ট বেদনা হতাশা ব্যর্থতার গ্লানি মুছে যাক বৈশাখী দক্ষিণা সমীরনের দমকা হাওয়ায়। ভরে উঠুক বাঙ্গালীর জীবনের প্রতিটি কানায় কানায় । হৃদয়ের রন্দ্রে রন্দ্রে বেজে উঠুক সাম্যের গান-আল ক্বোর'আন, গীতা , বাইবেল, ত্রিপিটক ও বিধাতার প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার সমীহ শ্রদ্ধা ভক্তি একান্ত আত্মসমর্পণ। সুখে থাকুক গোপালগঞ্জের হতভাগা চির অভাগা চির বঞ্চিত লাঞ্ছিত শেখ লুতফর রহমানের সোনার ছেলে শেখ মুজিবের ১৬ কোটি ৩৫ লক্ষ মানুষ; যে একটি মানুষ স্ত্রীপুত্র কন্যা মা বাবা ভাই বোন থেকে বঞ্ছিত হয়ে সারাটি জীবন এই বাঙ্গালীর জন্য দেশ থেকে দেশান্তরে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া কখনো পায়ে হেটে কখনো নৌকায় আবার কখনো ভাংগা গাড়িতে চড়ে হতভাগা হতদরিদ্র্য চির লাঞ্ছিত বঞ্চিত অবহেলিত শোষিত দুখি বাঙ্গালীর খোজ নিতে গিয়ে নিজের জীবনের সকল সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়েছিলেন বদ্ধ জেলখানায় বসেও যার বাঙ্গালীর চিন্তায় নিদ্রায় যেতে পারতেন না, সে সোনার দেশের সোনার ছেলে গোপালগঞ্জের শেখ মুজিবের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উদ্গত ভালোবাসায় সিক্ত বাংলাদেশ ও বাঙ্গালী জাতি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমৃদ্ধশালী দেশ হয়ে উঠুক। বাঙ্গালী থাক মাছে ভাতে দুধে আমে মিষ্টিতে অনাদিকাল বৈশাখের ১ম দিনের প্রথম বৃষ্টির পবিত্র জল্ধারায় ধুয়ে মুছে নিষ্কলঙ্ক নিস্পাপ হয়ে যাক বাঙ্গালী জাতি।
SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
Thursday, April 12, 2018
মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ
মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ
মহোদয়,
যথাযোগ্য মর্যাদা ও সন্মান পুরঃসর বিনীত নিবেদন এই যে, আমি জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি জাতীয় কন্ঠশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নূর আলীর ব্যক্তিগত সচিব থাকাকালীণ ২০০২ সালে জামাত বি এন পি জোট সরকারের অবৈধ আস্তানা "হাওয়া ভবনের" ভূয়া মামলা ও নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই এবং মালদ্বীপে এসে একটি স্কুলে শিক্ষকতা শূরু করি।
আমার চির স্বভাবজনিত দুর্বিনীত প্রতিবাদী মানসিকতার কথা স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান সরকারের বহু নেতা/মন্ত্রীগণ অবহিত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে বঙ্গবন্ধুর গানের মুক্তি নামেই সর্বজনবিদিত।
আওয়ামী রক্ত তাই প্রবাসে এসেও নীরব থাকতে পারিনি; যে দেশে প্রবাসীদের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ সে দেশে আমি মুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ।
মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ( সাবেক হাই কমিশন) এর সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবে বহু লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।
এমন কি এতদবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জেনারেল আবেদীন, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল ফারুক, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, জুনায়েদ আহমেদ পলক ও ডঃ দীপুমনিও অবহিত আছেন।
মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের অনেক অনুষ্ঠানেই বহু মন্ত্রী ও মান্যবর সাবেক হাই কমিশনার রিয়ার এডমিরাল আওয়াল সাহেবও যোগদান করেছিলেন । ভিডিও ও ছবি প্রমানবহন করে (ছবি সংযুক্ত )
মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২০১৪ সালে ইস্কান্দার স্কুলে জাতীয় শোক দিবস পালনের আয়োজন করেছিলাম । সে অনুষ্ঠান করতে দেয়নি হেড অফ দি চ্যাঞ্চেরী হারুন অর রশিদ।
আমি মালদ্বীপের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ডঃ ইয়ামীন মাওমুনের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সামনেই ছিলাম।
হঠাত একটি ফোন এলোঃ
*******************
ঃহ্যালো আমি হেড অফ দি চ্যাঞ্ছেরী হারুন অর রশিদ বলছি;
ঃকে মুক্তি সাহেব বলছেন?
ঃজ্বি
ঃশুনেছি আপনি ১৫ই আগষ্ট পালন করছেন আপনার ইস্কান্দার স্কুলে?
ঃজ্বি আমার সব অনুষ্ঠান তো ইস্কান্দার স্কুলেই হয়ে থাকে।
ঃআপনি এ অনুষ্ঠান করতে পারবেন না; ঐ দিন হাই কমিশন থেকে অনুষ্ঠান করা হবে সূতরাং আপনার অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে;
ঃআমি এ মুহূর্তে কথা বলতে পারছি না; আমি প্রেসিডেন্টের সামনে কাজেই পড়ে কথা বলছি;
ঃআপনি বুঝতে পারছেন তো যে হাই কমিশন আপনাকে কল করেছে?
******************
মালদ্বীপের রাজধানী মালে ইস্কান্দার স্কুলে আমি মুক্তি যে হলটিতে পররাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রবাসী কল্যান ও জনশক্তিমন্ত্রী ইঞ্জিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেরকে সংবর্ধনা দিয়েছি, সে হলেই আয়োজন করেছিলাম জাতীয় শোক দিবস ২০১৪।
সে অনুষ্ঠানের অপরাধেই আমার মালদ্বীপের সোনালী দিনগুলো ১৫ই আগস্টের চেয়েও ভয়াবহ করে তুলেছিল এই হারুন অর রশিদ, হেড অফ দি চ্যাঞ্ছেরী এবং সাবেক হাই কমিশনার রিয়ার এডমিরাল আওয়াল।
********
মালদ্বীপে আমার হাতে গড়া আওয়ামী লীগের ছেলেদের ভয় ভীতি দেখিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে পঙ্গু করে দেয়া হল। তারপরেও হারুন অর রশিদ সাহেবের খায়েশ মিটেনি। সে মালে অবস্থানরত তার পোষা দালাল আদম ব্যবসায়ী, গাঞ্জা ব্যবসায়ী, ডলার ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ নিয়ে চলে এবং সীমাহীন দুর্নীতি লুটপাট করে বেড়ায়। এখানে অতিরঞ্জিত কিছুই লিখছি না। প্রমান সহই দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করেছি আমি তদন্ত চাই। অতি সম্প্রতি সে ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। আমাকে টেলিফোনে মারধর করার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি মালদ্বীপ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
মালদ্বীপ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয়ে গেল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশ দূতাবাস গত ২১শে ফেব্রুয়ারি এবং স্বাধীনতা দিবসে একজন ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় কন্ঠশিল্পী ও মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মালদ্বীপ সরকারের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিক্ষক (আমি নিজে ), একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মালদ্বীপে কর্মরত ৩৩ বছরের সিনিয়র ফিজিক্সের শিক্ষক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মীর সাইফুল ইসলাম এবং আর একজন ২৫ বছর যাবত মালদ্বীপে শিক্ষকতায়রত গজল সঙ্গীত শিল্পী মালদ্বীপের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সর্বজনবিদিত শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম।
এই তিন জন শিক্ষকের কাউকেই মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মালদ্বীপস্থ দূতাবাস নিমন্ত্রণ করেন নি। বিষয়টি মালদ্বীপের মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্ট হাউসের কর্মকর্তাদেরও নজরে এসেছে। এ দেশে বাংলাদেশী এই তিনজন শিক্ষকই অত্যন্ত দক্ষতার কারনে এবং বিশেষ করে শফিক ও আমি গানের কারনে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে কোন মন্ত্রী, ধনিক ব্যবসায়ী, বর্ণাঢ্য বণিক শিল্পী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কেউ নেই যে আমাদের এই তিনজনকে না চিনেন বা না জানেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে স্বাধীনতা দিবসে আমন্ত্রণ না করার হেতু একটাই হতে পারে যে দেশ আজো স্বাধীন হয়নি অথবা এই দূতাবাস পাকিস্তানের অথবা এই দূতাবাসে মহান স্বাধীনতার স্বপক্ষের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী নেই।
মহান স্বাধীনতা দিবসে কেন আমাদের দূতাবাস নিমন্ত্রণ করেনি? আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভাগীয় মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে আপনাকে অবহিত করলাম।
আমরা জাতীয় সম্পদ। আমাদেরকে জাতীয়ভাবেই অপমান করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। কারন জানতে চাই।
মহানুভব, পররাষ্ট্রনীতি ও কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত আপনার সমগ্র জীবনের লব্ধ অভিজ্ঞতা আজ পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রশাসনিক জটিলতা সমস্যাদি সমাধান ও বিদেশের সাথে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপনে আপনার সততা শ্রম ও সফলতার সূত্র ধরেই আজ সুবিচারের প্রত্যাশায় আপনাকে অবহিত করলাম। যদি বাংলাদেশ সরকার মনে করে আমি বাঙ্গালী নই, বাংলাদেশী নই-আমার পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার জব্ধ করতে পারে, আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্ত এ অপমানের বোঝা নিয়ে বাঙ্গালী হিসেবে আর মালদ্বীপে পরিচয় দিতে চাইনা। প্রয়োজনে পাসপোর্ট পুড়িয়ে শরণার্থী হয়ে যাবো যেমনটি হয়েছিলাম ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নিয়ে।
ভালো থাকুক দেশের মানুষ ভালো থাকুক শেখ মুজিবের নিরস্পেষিত নির্যাতিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত অবহেলিত চির দুখি চির সংগ্রামী বাঙ্গালী জাতি।
আল্লাহ আপনার ভালো করুন;
দেশ আরো এগিয়ে যাক, আরো উন্নয়ন ঘটূক, উত্তরোত্তর বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ খ্যাত স্বীকৃতিকে ডিঙ্গিয়ে উন্নত দেশের তালিকায় লিপিবদ্ধ হোক;
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
আপনার একান্ত ভক্ত অনুরাগী
মোকতেল হোসেন মুক্তি
বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় কন্ঠশিল্পী
সিনিয়র সঙ্গীত শিক্ষক
ইস্কান্দার স্কুল মালে, মালদ্বীপ
Monday, March 5, 2018
অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ও ভাতা প্রসঙ্গে এত জ্বলন কেন? মোকতেল হোসেন মুক্তি
অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা ও ভাতা প্রসঙ্গে এত জ্বলন কেন? মোকতেল হোসেন মুক্তি
“সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি”-
former secretary Nazrul Islam khan N I Khan নামেই বেশী পরিচিত। সাবেক এই সচিব মহান মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ৪ নেতাদের নিয়ে অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখা লিখেছেন। মনে প্রাণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির একজন তুখোড় লেখক সমালোচক এবং গবেষক । তিনি উচ্চ শিক্ষিত বিধায় তাঁকে নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কিন্তু একটি বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না যে তিনি কেন হঠাত করে মূর্খ গরীব অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের একান্ত প্রাপ্য জাতীয় মর্যাদা ও সন্মানাদি প্রসঙ্গে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং বিরুপ কঠোর সমালোচনামূলক বিতর্কের সৃষ্টি করলেন? একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও আমার সন্তান আমি বিদেশে নিজের কষ্টার্জিত অর্থেই লেখা পড়া করিয়েছি। নিজে যা'পারিনি তা' সন্তানদের পুরন করার এই যে মহান প্রত্যয় ও প্রত্যাশা তা' বাস্তবায়ন করা অতি হত দরিদ্র্য নিভৃত পল্লীর অখ্যাত অজ্ঞাত অশিক্ষিত একজন বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আদৌ সম্ভব নয়। ১। মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধকালীন আমার কমান্ডার New Zealand প্রবাসী Hanif Mahmud নিজেও উচ্চ শিক্ষিত এবং তাঁর সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ২। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী সেক্টর কমান্ডারগণ/ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক/ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলী/নৌ পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খানসহ আরো অগনিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা অথবা তাদের সন্তানেরা কি অশিক্ষিত? অন্যান্য বিত্তশালী উচ্চ শিক্ষিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী/শিল্পী/সাহিত্যিকগীতিকার/সুরকার/সচিব/কবি/লেখক/ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারদের কথা না হয় উল্লেখ নাই করলাম। যাদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে এই বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার কোটা প্রয়োজন নেই। তাই তাঁরা এ সব নিয়ে কখনো মাথায় ঘামাননি বা বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কোন মিডিয়া বা পত্র/পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়নি। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা এই হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ে অবহেলা অবজ্ঞা দীনহীন মানবেতর জীবন যাপন করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়নের লক্ষ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা/কোটা ইত্যাদিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যথা গ্যাস বিল পানি বিল বিদ্যুৎ বিল সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স-আয়কর কিছুটা কমিয়ে সহজতর করার চেষ্টা করেছেন। যদিও এরই মধ্যে বিগত জামাত বি এন পি সরকারের অশুভ কর্ম পরিধি মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করেছে। তালিকায় নাম এসেছে ৪ বছরের দুধের শিশুর। বিধায় আসল মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই নাম আজো তালিকাভুক্ত হয়নি। যে সমস্যা নিয়ে আমরা অনেকেই হা হুতাশ এবং বর্তমান সরকারের মন্ত্রী নেতা ও কমান্ডারদের কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছি। অন্যদিকে অমুক্তিযোদ্ধা হাতিয়ে নিচ্ছে শেখ হাসিনার দেয়া সকল সুযোগ সুবিধাদি। "সকলের জন্য ধান, সকলের জন্য চাল, সকলের জন্য পানি, সকলের জন্য ভূমি, শিক্ষা, সকলের জন্য অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, সকলের জন্য আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুসমবন্টন, সকলের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল, সকলের জন্য একটি সুখি সাচ্ছন্দ জীবন ব্যবস্থার জন্যই জাতিরজনকের আজীবন সংগ্রাম এই মহান "স্বাধীনতা"। সাড়ে সাত কোটি থেকে আজ আমরা ১৬ কোটি ৩৫ লক্ষে পৌছে গিয়েও সমাধান করা সম্ভব হয়নি হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা। এর মূল কারন ১৯৭৫ সালে জাতিরজনক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং পাকিস্তান আই এস আই'র পা'চাটা কুকুর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ফলে হারিয়ে গিয়েছে আসল মুক্তিযোদ্ধারা এবং দেশপ্রেমিক সোনার মানুষগুলো। "৭৫ পরবর্তী এমনও পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে যে ভয়ে অনেকেই স্বীকার করেনি যে আমি মুক্তিযোদ্ধা" বা আওয়ামী লীগ সমর্থনকারী । কি ভয়াবহ ছিল বাঙ্গালী জাতির ২১টি বছর! ভাবতে গেলে গা'শিউরে ওঠে! লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে স্বাধীনতা বিরোধী আল বদর আল শামস আল-রাজাকারের কোন সন্তান অশিক্ষিত নয় এবং দারিদ্র্যসীমার নীচে জীবন প্রবাহ অতিবাহিত করে না। ভাগ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় " একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর একটি সেমিনারে উল্লেখ করেছিলেন " মহান স্বাধীনতায় বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করলেও স্বাধীনতার সুফল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ঘরে পৌছায় নি" কথাগুলো একটি ছোট মানুষের হলেও বিশাল এবং ব্যাপক অর্থে মহা দর্শনের চেয়েও অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়ের সে বক্তব্য। অতি সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জনৈক মুনতাসীর মামুন স্যার এবং শাহরিয়ার কবীর (যিনি জীবনে তাঁর কোন লেখায় বঙ্গবন্ধুকে জাতিরজনক বলে স্বীকার করেন নি বা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন লেখা প্রবন্ধ গল্প কাহিনী কখনো লিখেন নি কিন্তু তিনি রাজাকারের ফাসি চেয়েছেন) এই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন এবং পরবর্তীতে নেত্রীর পরোক্ষ ধমক অর্থাৎ সান্টিং খেয়েই দালাল নির্মূল কমিটির দালালগণ থেমে গিয়েছিলেন। মুনতাসীর মামুন সাহেব আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পয়সায় ইতোমধ্যে পবিত্র হজ্বব্রতটিও বীনা পয়সায় সেরে নিয়েছেন। যাক সে কথা লিখছিলাম। একটি বিষয় আমি ৭১ থেকে এ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ করে এসেছি এবং হিসাব মিলিয়েও দেখেছি যে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান স্যারের কথার মধ্যে কিছুটা সত্যতা খুজে পেলেও এই ভাতা ও কোটার বিরুদ্ধে তাঁর মত বিচক্ষন ব্যক্তি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্ব উচ্চ ডিগ্রিধারী একজন পণ্ডিত ব্যক্তির বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি সমর্থকের কলামে/ভাষায়/লেখায়/বলায়/ তর্কে /বিতর্কে বিরোধীতা কেমন যেনো বেমানান এবং অশালীনতার মতই গা'জ্বালাময় বক্তব্য। আমি তাঁকে চিনি এবং জানি। তিনি মনে প্রাণেই জাতিরজনকের একান্ত ভক্ত অনুসারী । কিন্তু এই হতভাগা দীনহীন অশিক্ষিত হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ের সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের "অশিক্ষিত বা মূর্খ" শব্দটি ব্যবহার করে সর্বনাশ করে দিলেন! আমি হতবাক নজরুল স্যার! আপনার মত ব্যক্তির মূখে মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের মত বস্তাপচা সস্তা হাত তালির প্রত্যাশায় এহেন বক্তব্য নিদারুণ বেদনাদায়ক এবং অসহনীয়। আমার গ্রামে আব্দুর রহিম সরদার নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা। যার সন্তান এস এস সি পরীক্ষা দেবার ফি না দিতে পারার কারনে ঘরে বসে কাদতে ছিলেন। তারপরে যেভাবেই হোক অন্য কেউ ব্যবস্থা করেছিল। আজ যদি এই হত দরিদ্র্য আব্দুর রহিম সরদারের অর্থ থাকত তাহলে ইউনুক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলি স্যারের মতই এই রহিমের ছেলেও আমেরিকান ইন্টারন্যাসনাল স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে নিউ ইয়র্কে লেখা পড়া করত এবং মাসের ঐ ১০ হাজার টাকা ভিক্ষা এবং ছেলেকে ভর্তি ফি না দিতে পারার যন্ত্রণায় কাতরাতে হতনা। কাজেই এই হত দরিদ্র্য রহিমের ছেলে যেভাবেই হোক পাস করে একটি চাকুরী নিতে যাবে। ১০০ মার্কের মধ্যে যদি সে ৮০ থেকে ৯০ ও প্রাপ্ত হয় তার চাকুরী হবে না। কেন জানেন? কারন একটি সরকারী চাকুরী নিতে গোটা দেশে এখন হাইব্রীড কাউয়া ফার্মের মূরগীর দালালদের নিকট প্রথমে দৌড়াতে হবে। তারপরে চুক্তি হবে দালালের সাথে। কত লাখ দিতে পারবেন? না না তা' হবে না, কারন মন্ত্রী সাহেবকেই দিতে হবে ৫ লাখ। তারপরে ওমক নেতাকে দিতে হবে এবং এর মধ্য থেকেই আমার % রাখতে হবে। এখন আসুন আসল কথায় আমার গ্রাম দক্ষিন আকাল বরিশ ঐ যে হতভাগা বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম সরদারের ছেলে গল্প বলছিলাম-সে আব্দুর রহিম সরদার ওর বাপ দাদা ১৪ গুষ্ঠির সকল ঘর বাড়ী সহায় সম্বল কম্বল বিক্রয় করলেও ২ লাখ টাকার বেশী যোগার করতে পারবে না। আমার আত্মীয় আমার সহপাঠী, সহযোদ্ধা বন্ধু, আমি তার একান্তজন হিসেবে সবই জানি। সে আমারই এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছিল। তাহলে নজরুল স্যার আপনি যে বললেন সকল % কেটে মাত্র ৫% কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সীমিত রাখতে, বাকীটা কি ঐ সকল আল বদর আল শামস আল রাজাকারের সন্তানের জন্য রাখতে বলছেন? নাকি আপনার ছেলে মেয়ে অথবা মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের ছেলে মেয়েদের জন্য রাখতে বলছেন? তবে স্যার একটা কথা জেনে রাখবেন-মনে রাখবেন " জাতিরজনকের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ও ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লেখ করা উচিত ছিল যে অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে পারবে না - শুধু আপনাদের মত মহা জ্ঞানপাপী পন্ডিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী সুদখোড় ইউনুসের মত ধনকুবের লুটেরা, রাজাকার মুসা বীন শমসেরের (লুনা মুসার) মত গোটা বাংলাদেশের খেতে খামারে ব্রিটিশ সরকারের গাঁরা ম্যাকনেট চুরি করে বিক্রয়কারী) মুনতাসীর মামুনের মত দালাল এবং শাহরিয়ার কবীরের মত সুবিধাভোগি চাটুকর তোষামোদকারীরাই মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবে। যেহেতু বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক জেলে তাতী কামার কুমার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কবি শিল্পী সাহিত্যিক লেখক নৌকার মাঝি ইঞ্জিনের ড্রাইভার অথবা রিকশা/ভ্যানগাড়ী চালক/বাসের ড্রাইভার/হেল্পার/ঠিকাদার কারো কথাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেননি। সেহেতু আপনাদের এহেন অবান্তর অহেতুক কোটার বিরোধী তথা হত দরিদ্র্য দীনহীন মজদুর অজো পাড়া গায়ের নিভৃত পলীতে রাত দিন আপনাদের মূখের অন্ন ফলানোর কাজে ব্যস্ত বয়োবৃদ্ধ অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধের "অশিক্ষিত" বলে সম্বোধন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনকের বিদেহী আত্মাকে কষ্ট দেবার চেষ্টা থেকে বিরত হোন। আপনি ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন। আমরাত অশিক্ষিতই; সে দোষ ত আমাদের না স্যার? সে দোষ পশ্চিমা শোষক হায়েনা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লিয়াকত আলী খান আইউব খান টিক্কা খান, মোনায়েম খানদের। “সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি।”- কবির এ মর্মবেদনা অনেক পুরোনো।সেদিনের কবির চেতনায় আগুন ধরেছিল বঙ্গ সন্তানদের চেহারা দেখে। তাই বড় আফসোস করে কবি তার বেদনা দগ্ধ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন কাব্যিক ছন্দে।কিন্তু আজ অনেক চড়াই উৎরাই ঘাত প্রতিঘাত আর উস্থান-পতনের মাধ্যমে স্বাধীনতার এতো বছর পরেও বাঙ্গালীর জাতির পিতা নিয়ে আমরা নষ্ট খেলা,ইতিহাস নিয়ে টানাটানি এবং অপবাদ নিয়ে মেতে আছি। আমরা আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে, সংশয় এবং মানা না মানার মধ্যে দিয়ে যে নষ্ট খেলায় মেতে আছি তা শুধু আমাদের জন্য অপমান জনক না বরং তা আমাদের বিশ্বের মানচিত্রে অতি নগ্ন হিসাবেই পরিচিত লাভ করাতে দ্বিগুন সাহায্য করে। ঠিক তেমনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নে এবং ভাতা ও কোটা নিয়েও আপনারা আজ জাতিরজনক নেই বলেই টানা হেচড়া করে সন্মানের বদলে অসন্মান করছেন। তাহলে আমাদের ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ডেকে কেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে অস্ত্র জমাদানের প্রাক্কালে জীবন প্রদ্বীপ নিভিয়ে দিলেন না?
former secretary Nazrul Islam khan N I Khan নামেই বেশী পরিচিত। সাবেক এই সচিব মহান মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ৪ নেতাদের নিয়ে অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখা লিখেছেন। মনে প্রাণেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির একজন তুখোড় লেখক সমালোচক এবং গবেষক । তিনি উচ্চ শিক্ষিত বিধায় তাঁকে নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কিন্তু একটি বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না যে তিনি কেন হঠাত করে মূর্খ গরীব অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের একান্ত প্রাপ্য জাতীয় মর্যাদা ও সন্মানাদি প্রসঙ্গে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং বিরুপ কঠোর সমালোচনামূলক বিতর্কের সৃষ্টি করলেন? একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও আমার সন্তান আমি বিদেশে নিজের কষ্টার্জিত অর্থেই লেখা পড়া করিয়েছি। নিজে যা'পারিনি তা' সন্তানদের পুরন করার এই যে মহান প্রত্যয় ও প্রত্যাশা তা' বাস্তবায়ন করা অতি হত দরিদ্র্য নিভৃত পল্লীর অখ্যাত অজ্ঞাত অশিক্ষিত একজন বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আদৌ সম্ভব নয়। ১। মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধকালীন আমার কমান্ডার New Zealand প্রবাসী Hanif Mahmud নিজেও উচ্চ শিক্ষিত এবং তাঁর সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ২। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী সেক্টর কমান্ডারগণ/ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক/ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলী/নৌ পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খানসহ আরো অগনিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা অথবা তাদের সন্তানেরা কি অশিক্ষিত? অন্যান্য বিত্তশালী উচ্চ শিক্ষিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী/শিল্পী/সাহিত্যিকগীতিকার/সুরকার/সচিব/কবি/লেখক/ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ারদের কথা না হয় উল্লেখ নাই করলাম। যাদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে এই বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার কোটা প্রয়োজন নেই। তাই তাঁরা এ সব নিয়ে কখনো মাথায় ঘামাননি বা বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কোন মিডিয়া বা পত্র/পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়নি। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা এই হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ে অবহেলা অবজ্ঞা দীনহীন মানবেতর জীবন যাপন করা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়নের লক্ষ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা/কোটা ইত্যাদিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যথা গ্যাস বিল পানি বিল বিদ্যুৎ বিল সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স-আয়কর কিছুটা কমিয়ে সহজতর করার চেষ্টা করেছেন। যদিও এরই মধ্যে বিগত জামাত বি এন পি সরকারের অশুভ কর্ম পরিধি মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করেছে। তালিকায় নাম এসেছে ৪ বছরের দুধের শিশুর। বিধায় আসল মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই নাম আজো তালিকাভুক্ত হয়নি। যে সমস্যা নিয়ে আমরা অনেকেই হা হুতাশ এবং বর্তমান সরকারের মন্ত্রী নেতা ও কমান্ডারদের কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছি। অন্যদিকে অমুক্তিযোদ্ধা হাতিয়ে নিচ্ছে শেখ হাসিনার দেয়া সকল সুযোগ সুবিধাদি। "সকলের জন্য ধান, সকলের জন্য চাল, সকলের জন্য পানি, সকলের জন্য ভূমি, শিক্ষা, সকলের জন্য অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, সকলের জন্য আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুসমবন্টন, সকলের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল, সকলের জন্য একটি সুখি সাচ্ছন্দ জীবন ব্যবস্থার জন্যই জাতিরজনকের আজীবন সংগ্রাম এই মহান "স্বাধীনতা"। সাড়ে সাত কোটি থেকে আজ আমরা ১৬ কোটি ৩৫ লক্ষে পৌছে গিয়েও সমাধান করা সম্ভব হয়নি হতভাগা মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা। এর মূল কারন ১৯৭৫ সালে জাতিরজনক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং পাকিস্তান আই এস আই'র পা'চাটা কুকুর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ফলে হারিয়ে গিয়েছে আসল মুক্তিযোদ্ধারা এবং দেশপ্রেমিক সোনার মানুষগুলো। "৭৫ পরবর্তী এমনও পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে যে ভয়ে অনেকেই স্বীকার করেনি যে আমি মুক্তিযোদ্ধা" বা আওয়ামী লীগ সমর্থনকারী । কি ভয়াবহ ছিল বাঙ্গালী জাতির ২১টি বছর! ভাবতে গেলে গা'শিউরে ওঠে! লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে স্বাধীনতা বিরোধী আল বদর আল শামস আল-রাজাকারের কোন সন্তান অশিক্ষিত নয় এবং দারিদ্র্যসীমার নীচে জীবন প্রবাহ অতিবাহিত করে না। ভাগ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় " একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর একটি সেমিনারে উল্লেখ করেছিলেন " মহান স্বাধীনতায় বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করলেও স্বাধীনতার সুফল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ঘরে পৌছায় নি" কথাগুলো একটি ছোট মানুষের হলেও বিশাল এবং ব্যাপক অর্থে মহা দর্শনের চেয়েও অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়ের সে বক্তব্য। অতি সম্প্রতি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জনৈক মুনতাসীর মামুন স্যার এবং শাহরিয়ার কবীর (যিনি জীবনে তাঁর কোন লেখায় বঙ্গবন্ধুকে জাতিরজনক বলে স্বীকার করেন নি বা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন লেখা প্রবন্ধ গল্প কাহিনী কখনো লিখেন নি কিন্তু তিনি রাজাকারের ফাসি চেয়েছেন) এই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন এবং পরবর্তীতে নেত্রীর পরোক্ষ ধমক অর্থাৎ সান্টিং খেয়েই দালাল নির্মূল কমিটির দালালগণ থেমে গিয়েছিলেন। মুনতাসীর মামুন সাহেব আবার আওয়ামী লীগ সরকারের পয়সায় ইতোমধ্যে পবিত্র হজ্বব্রতটিও বীনা পয়সায় সেরে নিয়েছেন। যাক সে কথা লিখছিলাম। একটি বিষয় আমি ৭১ থেকে এ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ করে এসেছি এবং হিসাব মিলিয়েও দেখেছি যে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান স্যারের কথার মধ্যে কিছুটা সত্যতা খুজে পেলেও এই ভাতা ও কোটার বিরুদ্ধে তাঁর মত বিচক্ষন ব্যক্তি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্ব উচ্চ ডিগ্রিধারী একজন পণ্ডিত ব্যক্তির বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি সমর্থকের কলামে/ভাষায়/লেখায়/বলায়/ তর্কে /বিতর্কে বিরোধীতা কেমন যেনো বেমানান এবং অশালীনতার মতই গা'জ্বালাময় বক্তব্য। আমি তাঁকে চিনি এবং জানি। তিনি মনে প্রাণেই জাতিরজনকের একান্ত ভক্ত অনুসারী । কিন্তু এই হতভাগা দীনহীন অশিক্ষিত হত দরিদ্র্য অজো পাড়া গায়ের সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের "অশিক্ষিত বা মূর্খ" শব্দটি ব্যবহার করে সর্বনাশ করে দিলেন! আমি হতবাক নজরুল স্যার! আপনার মত ব্যক্তির মূখে মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের মত বস্তাপচা সস্তা হাত তালির প্রত্যাশায় এহেন বক্তব্য নিদারুণ বেদনাদায়ক এবং অসহনীয়। আমার গ্রামে আব্দুর রহিম সরদার নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা। যার সন্তান এস এস সি পরীক্ষা দেবার ফি না দিতে পারার কারনে ঘরে বসে কাদতে ছিলেন। তারপরে যেভাবেই হোক অন্য কেউ ব্যবস্থা করেছিল। আজ যদি এই হত দরিদ্র্য আব্দুর রহিম সরদারের অর্থ থাকত তাহলে ইউনুক গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর আলি স্যারের মতই এই রহিমের ছেলেও আমেরিকান ইন্টারন্যাসনাল স্কুলে ইংলিশ মিডিয়ামে নিউ ইয়র্কে লেখা পড়া করত এবং মাসের ঐ ১০ হাজার টাকা ভিক্ষা এবং ছেলেকে ভর্তি ফি না দিতে পারার যন্ত্রণায় কাতরাতে হতনা। কাজেই এই হত দরিদ্র্য রহিমের ছেলে যেভাবেই হোক পাস করে একটি চাকুরী নিতে যাবে। ১০০ মার্কের মধ্যে যদি সে ৮০ থেকে ৯০ ও প্রাপ্ত হয় তার চাকুরী হবে না। কেন জানেন? কারন একটি সরকারী চাকুরী নিতে গোটা দেশে এখন হাইব্রীড কাউয়া ফার্মের মূরগীর দালালদের নিকট প্রথমে দৌড়াতে হবে। তারপরে চুক্তি হবে দালালের সাথে। কত লাখ দিতে পারবেন? না না তা' হবে না, কারন মন্ত্রী সাহেবকেই দিতে হবে ৫ লাখ। তারপরে ওমক নেতাকে দিতে হবে এবং এর মধ্য থেকেই আমার % রাখতে হবে। এখন আসুন আসল কথায় আমার গ্রাম দক্ষিন আকাল বরিশ ঐ যে হতভাগা বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম সরদারের ছেলে গল্প বলছিলাম-সে আব্দুর রহিম সরদার ওর বাপ দাদা ১৪ গুষ্ঠির সকল ঘর বাড়ী সহায় সম্বল কম্বল বিক্রয় করলেও ২ লাখ টাকার বেশী যোগার করতে পারবে না। আমার আত্মীয় আমার সহপাঠী, সহযোদ্ধা বন্ধু, আমি তার একান্তজন হিসেবে সবই জানি। সে আমারই এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছিল। তাহলে নজরুল স্যার আপনি যে বললেন সকল % কেটে মাত্র ৫% কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সীমিত রাখতে, বাকীটা কি ঐ সকল আল বদর আল শামস আল রাজাকারের সন্তানের জন্য রাখতে বলছেন? নাকি আপনার ছেলে মেয়ে অথবা মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের ছেলে মেয়েদের জন্য রাখতে বলছেন? তবে স্যার একটা কথা জেনে রাখবেন-মনে রাখবেন " জাতিরজনকের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ও ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লেখ করা উচিত ছিল যে অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে পারবে না - শুধু আপনাদের মত মহা জ্ঞানপাপী পন্ডিত বর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী সুদখোড় ইউনুসের মত ধনকুবের লুটেরা, রাজাকার মুসা বীন শমসেরের (লুনা মুসার) মত গোটা বাংলাদেশের খেতে খামারে ব্রিটিশ সরকারের গাঁরা ম্যাকনেট চুরি করে বিক্রয়কারী) মুনতাসীর মামুনের মত দালাল এবং শাহরিয়ার কবীরের মত সুবিধাভোগি চাটুকর তোষামোদকারীরাই মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবে। যেহেতু বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক জেলে তাতী কামার কুমার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কবি শিল্পী সাহিত্যিক লেখক নৌকার মাঝি ইঞ্জিনের ড্রাইভার অথবা রিকশা/ভ্যানগাড়ী চালক/বাসের ড্রাইভার/হেল্পার/ঠিকাদার কারো কথাই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেননি। সেহেতু আপনাদের এহেন অবান্তর অহেতুক কোটার বিরোধী তথা হত দরিদ্র্য দীনহীন মজদুর অজো পাড়া গায়ের নিভৃত পলীতে রাত দিন আপনাদের মূখের অন্ন ফলানোর কাজে ব্যস্ত বয়োবৃদ্ধ অশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধের "অশিক্ষিত" বলে সম্বোধন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিরজনকের বিদেহী আত্মাকে কষ্ট দেবার চেষ্টা থেকে বিরত হোন। আপনি ভালো থাকুন। সুন্দর থাকুন। আমরাত অশিক্ষিতই; সে দোষ ত আমাদের না স্যার? সে দোষ পশ্চিমা শোষক হায়েনা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লিয়াকত আলী খান আইউব খান টিক্কা খান, মোনায়েম খানদের। “সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করনি।”- কবির এ মর্মবেদনা অনেক পুরোনো।সেদিনের কবির চেতনায় আগুন ধরেছিল বঙ্গ সন্তানদের চেহারা দেখে। তাই বড় আফসোস করে কবি তার বেদনা দগ্ধ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন কাব্যিক ছন্দে।কিন্তু আজ অনেক চড়াই উৎরাই ঘাত প্রতিঘাত আর উস্থান-পতনের মাধ্যমে স্বাধীনতার এতো বছর পরেও বাঙ্গালীর জাতির পিতা নিয়ে আমরা নষ্ট খেলা,ইতিহাস নিয়ে টানাটানি এবং অপবাদ নিয়ে মেতে আছি। আমরা আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে, সংশয় এবং মানা না মানার মধ্যে দিয়ে যে নষ্ট খেলায় মেতে আছি তা শুধু আমাদের জন্য অপমান জনক না বরং তা আমাদের বিশ্বের মানচিত্রে অতি নগ্ন হিসাবেই পরিচিত লাভ করাতে দ্বিগুন সাহায্য করে। ঠিক তেমনি মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নে এবং ভাতা ও কোটা নিয়েও আপনারা আজ জাতিরজনক নেই বলেই টানা হেচড়া করে সন্মানের বদলে অসন্মান করছেন। তাহলে আমাদের ঢাকা ষ্টেডিয়ামে ডেকে কেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে অস্ত্র জমাদানের প্রাক্কালে জীবন প্রদ্বীপ নিভিয়ে দিলেন না?
Monday, February 26, 2018
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্ম নেয়া প্রথম বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধা মহিয়সী নারী
লীলা রায় ও দীপালী সঙ্ঘ
চট্টগ্রামের, পটিয়ার ধলঘাটে বীরকণ্যা প্রীতিলতা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ২০০৫ সনের ২২ শে ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠিত প্রীতিলতার আবক্ষ মূর্তির স্থিরচিত্র।প্রীতিলতা তখন সবে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রেখেছেন। চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা তখন মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন শেষে সক্রিয় হচ্ছিলেন। এর মধ্যে ১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস এর মোড়ে সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকা ছিনতাই করে। এ ছিনতাইয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পর গোপন বৈঠক চলাকালীন অবস্থায় বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সাথে যুদ্ধের পর গ্রেফতার হন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় রেলওয়ে ডাকাতি মামলা। এই ঘটনা কিশোরী প্রীতিলতার মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। স্কুলের প্রিয় শিক্ষক ঊষাদির সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই মামলার ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে অনেক কিছুই জানতে পারেন তিনি। ঊষাদির দেয়া “ঝাঁসীর রাণী” বইটি পড়ার সময় ঝাঁসীর রাণী লক্ষীবাইয়ের জীবনী তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। ১৯২৪ সালে বেঙ্গল অর্ডিনান্স নামে এক জরুরি আইনে বিপ্লবীদের বিনাবিচারে আটক করা শুরু হয়। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদলের অনেক নেতা ও সদস্য এই আইনে আটক হয়েছিল। তখন বিপ্লবী সংগঠনের ছাত্র আর যুবকদেরকে অস্ত্রশস্ত্র, সাইকেল ও বইপত্র গোপনে রাখার ব্যবস্থা করতে হত। সরকার বিপ্লবীদের প্রকাশনা সমুহ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। প্রীতিলতার নিকট-আত্মীয় পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন বিপ্লবী দলের কর্মী। তিনি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত কিছু গোপন বই প্রীতিলতার কাছে রাখেন। তখন তিনি দশম শ্রেনীর ছাত্রী। লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি পড়েন “দেশের কথা”, “বাঘা যতীন”, “ক্ষুদিরাম” আর “কানাইলাল”।এই সমস্ত গ্রন্থ প্রীতিলতাকে বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। প্রীতিলতা দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদারের কাছে বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করার গভীর ইচ্ছার কথা বলেন। কিন্তু তখনো পর্যন্ত বিপ্লবীদলে মহিলা সদস্য গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য কোন মেয়েদের সাথে মেলামেশা করাও বিপ্লবীদের জন্য নিষেধ ছিলো।
আত্মাহুতির স্থানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর প্রীতিলতার ব্রোঞ্জমূর্তি উন্মোচিত হয়।
ঢাকায় যখন প্রীতিলতা পড়তে যান তখন “শ্রীসংঘ” নামে একটি বিপ্লবী সংঘঠন ছিল। এই দলটি প্পকাশ্যে লাঠিখেলা, কুস্তি, ডনবৈঠক, মুষ্টিযুদ্ধশিক্ষা ইত্যাদির জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ক্লাব তৈরী করেছিল। ঢাকায় শ্রীসংঘের “দীপালী সঙ্ঘ” নামে একটি মহিলা শাখা ছিল। লীলা নাগ (বিয়ের পর লীলা রায়) এর নেতৃত্বে এই সংগঠনটি নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য কাজ করত। গোপনে তাঁরা মেয়েদের বিপ্লবী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ ও করত। ইডেন কলেজের শিক্ষক নীলিমাদির মাধ্যমে লীলা রায়ের সাথে প্রীতিলতার পরিচয় হয়েছিল। তাঁদের অনুপ্রেরণায় দীপালী সঙ্ঘে যোগ দিয়ে প্রীতিলতা লাঠিখেলা, ছোরাখেলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি লিখেছিলেন “আই এ পড়ার জন্য ঢাকায় দু’বছর থাকার সময় আমি নিজেকে মহান মাস্টারদার একজন উপযুক্ত কমরেড হিসাবে নিজেকে গডে তোলার চেষ্টা চালিয়েছি”। ১৯২৯ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে সূর্য সেন ও তাঁর সহযোগীরা চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের জেলা সম্মেলন, ছাত্র সম্মেলন, যুব সম্মেলন ইত্যাদি আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। নারী সম্মেলন করবার কোন পরিকল্পনা তখনও ছিলো না কিন্তু পূর্ণেন্দু দস্তিদারের বিপুল উৎসাহের জন্যই সূর্য সেন নারী সম্মেলন আয়োজনের সম্মতি দেন। মহিলা কংগ্রেস নেত্রী লতিকা বোসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রীতিলতা ঢাকা থেকে এবং তাঁর বন্ধু ও সহযোদ্ধা কল্পনা দত্ত কলকাতা থেকে এসে যোগদান করেন। তাঁদের দুজনের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল সূর্য সেনের অধীনে চট্টগ্রামের বিপ্লবী দলে যুক্ত হওয়ার কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তাঁদের ফিরে যেতে হয়। ১৯৩০ সালের ১৯ এপ্রিল আই এ পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন প্রীতিলতা। আগের দিন রাতেই চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের দীর্ঘ পরিকল্পিত আক্রমণে ধ্বংস হয় অস্ত্রাগার, পুলিশ লাইন, টেলিফোন অফিস এবং রেললাইন। এটি “চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ” নামে পরিচয় লাভ করে। চট্টগ্রামের মাটিতে বিপ্লবীদলের এই উত্থান সমগ্র বাংলার ছাত্রসমাজকে উদ্দীপ্ত করে। প্রীতিলতা লিখেছিলেন “পরীক্ষার পর ঐ বছরেরই ১৯শে এপ্রিল সকালে বাড়ি ফিরে আমি আগের রাতে চট্টগ্রামের বীর যোদ্ধাদের মহান কার্যকলাপের সংবাদ পাই। ঐ সব বীরদের জন্য আমার হৃদয় গভীর শ্রদ্ধায় আপ্লুত হল। কিন্তু ঐ বীরত্বপুর্ণ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে না পেরে এবং নাম শোনার পর থেকেই যে মাষ্টারদাকে গভীর শ্রদ্ধা করেছি তাঁকে একটু দেখতে না পেয়ে আমি বেদনাহত হলাম”।
ক্যাবলা'দা এবং গুণু পিসি
১৯৩০ সালে প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজে পড়তে আসেন। দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। যুব বিদ্রোহের পর তিনি মধ্য কলকাতায় বিপ্লবী মনোরঞ্জন রায়ের পিসির (গুণু পিসি) বাসায় আশ্রয় নেন। প্রীতিলতা ঐ বাসায় গিয়ে দাদার সঙ্গে প্রায় দেখা করতেন। পূর্ণেন্দু দস্তিদার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলে মনোরঞ্জন রায় (ক্যাবলা’দা নামে পরিচিত) নারী বিপ্লবীদের সংগঠিত করার কাজ করেন। যুব বিদ্রোহের পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার এবং কারাগারে বন্দী নেতাদের সাথে আত্মগোপনে থাকা সূর্য সেনের সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ হত। তাঁরা তখন আরো হামলার পরিকল্পনা করছিল। সূর্য সেন প্রেসিডেন্সী কলেজের কেমিষ্ট্রির ছাত্র মনোরঞ্জন রায়কে গান-কটন এবং বোমা তৈরীর নির্দেশ দেন। তিনি এসব সংগ্রহ করে পলাতক বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা গুণু পিসির বাসায় রাখতেন। এ বাসায় বসে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, রেণুকা রায়, কমলা চ্যাটার্জী প্রমুখ বহু গোপন বৈঠক করেন এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের পর মাষ্টারদার প্রেরিত ইস্তেহার সাইক্লোষ্টাইলে ছাপিয়ে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে বিতরন করেন। মনোরঞ্জন রায়ের সাথে প্রীতিলতা এবং কল্পনা দত্তের পরিচয়ের পর তিনি বুঝতে পারেন যে এই মেয়ে দুটিই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপ্লবী কাজ করতে সক্ষম হবে। ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশের নজরদারী এড়িয়ে মনোরঞ্জন রায় কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম এসে সূর্য সেনের হাতে গান-কটন এবং বোমা তুলে দেন। এসময় তিনি জেলে থাকা বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ করে চিঠির আদান প্রদান এবং কলকাতা থেকে বিস্ফোরক বহন করে আনার বিপদ সম্পর্কে মাষ্টারদার দৃষ্টি আকর্ষন করেন। শহর আর গ্রামের যুবক বয়সীরা পুলিশের চোখে সবচেয়ে বড় সন্দেহভাজন। এ অবস্থায় সূর্য সেন নারী বিপ্লবীদের এসব কাজের দায়িত্ব দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কারণ তখনো গোয়েন্দা বিভাগ মেয়েদের সন্দেহ করতো না। মাষ্টারদার অনুমতি পাওয়ার পর নারীদের বিপ্লবের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রীতিলতার ভাস্কর্য।
রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সান্নিধ্যে প্রীতিলতা
চট্টগ্রামে সূর্য সেনের কাছে বোমা পৌঁছে দিয়ে কলকাতা ফেরত আসার একদিন পরেই ২৪ নভেম্বর মনোরঞ্জন রায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।[৪৫] সে সময়ে টি জে ক্রেগ বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ পদে নতুন দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম সফরে আসেন। তাঁকে হত্যা করার জন্য মাষ্টার’দা রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে মনোনীত করলেন। পরিকল্পনা অনু্যায়ী ১৯৩০ সালের ২রা ডিসেম্বর চাঁদপুর রেলস্টেশনে তাঁরা রিভলবার নিয়ে আক্রমণ চালায় কিন্তু ভুল করে তাঁরা মিঃ ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এস ডি ও তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করেন। সেদিনেই পুলিশ বোমা আর রিভলবার সহ রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করে।[৪৬][৪৭] এই বোমাগু্লোই কলকাতা থেকে মনোরঞ্জন রায় চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। তারিণী মুখার্জি হত্যা মামলার রায়ে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের মৃত্যুদন্ড এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে নির্বাসন দন্ড দেয়া হয়।[৪৮] ব্যয়বহুল বলে আলিপুর জেলের ফাঁসির সেলে মৃত্যু গ্রহণের প্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণের সাথে চট্টগ্রাম থেকে আত্নীয়দের মধ্যে কেউ দেখা করতে আসা সম্ভব ছিল না। এ খবর জানার পর মনোরঞ্জন রায় প্রীতিলতার কাছে লেখা এক চিঠিতে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার চেষ্টা করতে অনুরোধ করেন। মনোরঞ্জন রায়ের মা হিজলী জেলে ছেলের সাথে দেখা করতে গেলে গোপনে তিনি প্রীতিলতাকে লেখা চিঠিটা তাঁর হাতে দেন।[৪৯] গুনু পিসির উপদেশ অনুযায়ী প্রীতিলতা মৃত্যুপ্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার জন্য আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষের কাছে “অমিতা দাস” ছদ্মনামে “কাজিন” পরিচয় দিয়ে দরখাস্ত করেন।[৫০] জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে তিনি প্রায় চল্লিশবার রামকৃষ্ণের সাথে দেখা করেন।[৫১] এ সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন “তাঁর (রামকৃষ্ণ বিশ্বাস) গাম্ভীর্যপুর্ণ চাউনি, খোলামেলা কথাবার্তা, নিঃশঙ্ক চিত্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা, ঈশ্বরের প্রতি অচলা ভক্তি, শিশুসুলভ সারল্য, দরদীমন এবং প্রগাঢ় উপলব্দিবোধ আমার উপর গভীর রেখাপাত করল। আগের তুলনায় আমি দশগুন বেশি কর্মতৎপর হয়ে উঠলাম। আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত এই স্বদেশপ্রেমী যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ আমার জীবনের পরিপূর্ণতাকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিল।”[৫২] ১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসী হয়।[২৬] এই ঘটনা প্রীতিলতার জীবনে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। তাঁর ভাষায় “রামকৃষ্ণদার ফাঁসীর পর বিপ্লবী কর্মকান্ডে সরাসরি যুক্ত হবার আকাঙ্ক্ষা আমার অনেক বেড়ে গেল।
দীর্ঘপ্রতীক্ষিত সময়ের অবসানঃ মাষ্টারদার সাথে সাক্ষাত
রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসীর পর আরো প্রায় নয় মাসের মতো প্রীতিলতাকে কলকাতায় থেকে যেতে হয় বি এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য।[৫২] পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে বাড়ি এসে দেখেন তাঁর পিতার চাকরি নাই। সংসারের অর্থকষ্ট মেটানোর জন্য শিক্ষকতাকে তিনি পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন।[৫৩] চট্টগ্রামে বিশিষ্ট দানশীল ব্যাক্তিত্ব অপর্ণাচরণ দে’র সহযোগিতায় তখন নন্দনকাননে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (বর্তমানে অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)। তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন।[৫৪] স্কুলে যাওয়া, প্রাইভেট পড়ানো, মাকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করে তাঁর দিনগুলো কাটছিল। কিন্তু তিনি লিখেছেন “১৯৩২ সালে বি এ পরীক্ষার পর মাষ্টারদার সাথে দেখা করবই এই প্রত্যয় নিয়ে বাড়ী ফিরে এলাম”।[৫২] বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্য সেনের সাথে সাক্ষাতের আগ্রহের কথা তিনি কল্পনা দত্তকে বলেন। প্রীতিলতা কলকাতা থেকে আসার এক বছর আগে থেকেই কল্পনা দত্ত বেথুন কলেজ থেকে বদলী হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে বি এস সি ক্লাসে ভর্তি হন। সেজন্য প্রীতিলতার আগেই কল্পনা দত্তের সাথে মাষ্টারদার দেখা হয়।[৫৫] ১৯৩১ সালে এই গোপন সাক্ষাতের সময় আত্মগোপনে থাকা মাষ্টারদার সাথে ছিলেন বিপ্লবী নির্মল সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার, শৈলেশ্বর চক্রবর্তী এবং কালীকিংকর দে।[৫১] মাষ্টারদা ঐ সাক্ষাতের সময় কল্পনা দত্তের কাছ থেকে প্রীতিলতা সম্পর্কিত খোঁজ খবর জানতে চান।[৫৬] এরমধ্যে একবার মাষ্টারদার সংগঠন চালানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু অর্থের প্রয়োজন দেখা দিল। প্রীতিলতার বাবা সংসারের খরচ চালানোর জন্য মাসিক বেতনের পুরো টাকাটা প্রীতিলতার হাতে দিতেন। তিনি ঐ টাকাটা সংগঠনের কাজে দিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু তা নিতে কল্পনা দত্ত আপত্তি করায় প্রীতিলতা কেঁদে বলেন “গরিব দেখে আমাদের টাকা নিতে চান না। আমি যে নিষ্ঠাবান কর্মী হতে পারব তার প্রমাণ করার সুযোগও কি আমায় দেবেন না?”।[৫৭][৫৮] প্রীতিলতার প্রবল আগ্রহের কারণেই কল্পনা দত্ত একদিন রাতে গ্রামের এক ছোট্ট কুটিরে তাঁর সাথে নির্মল সেনের পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৩২ সালের মে মাসের গোড়ার দিকে ঐ সাক্ষাতে নির্মল সেন প্রীতিলতাকে পরিবারের প্রতি কেমন টান আছে তা জানতে চাইলেন। জবাবে তিনি বলেন “টান আছে। কিন্তু duty to family-কে duty to country-র কাছে বলি দিতে পারব”।[৫৯] যুব বিদ্রোহের পর বিশৃঙ্খল হয়ে পড়া সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে মাষ্টারদা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কারণে প্রীতিলতার সাথে সে রাতে তাঁর দেখা হয়নি। প্রীতিলতার সাথে এই সাক্ষাতের কথা বলেতে গিয়ে মাষ্টারদা লিখেছেন “অল্প কয়েকদিন পরেই নির্মলবাবুর সঙ্গে আমার দেখা হতেই নির্মলবাবু আমায় বললঃ আমি রাণীকে (প্রীতিলতার ডাক নাম) কথা দিয়েছি আপনার সঙ্গে দেখা করাব, সে এক সপ্তাহের জন্য যে কোন জায়গায় আসতে রাজ়ী আছে। রামকৃষ্ণের সঙ্গে সে ফাঁসীর আগে দেখা করেছে শুনেই তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা হয়েছিল। তার দেখা করার ব্যাকুলতা শুনে রাজী হলাম এবং কয়েকদিনের মধ্যে (মে মাসের শেষের দিকে) তাকে আনার ব্যবস্থা করলাম”।[৫৬] মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতার প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনাতে মাষ্টারদা লিখেছেন “তার চোখেমুখে একটা আনন্দের আভাস দেখলাম। এতদূর পথ হেঁটে এসেছে, তার জন্য তার চেহারায় ক্লান্তির কোন চিহ্নই লক্ষ্য করলাম না। যে আনন্দের আভা তার চোখে মুখে দেখলাম, তার মধ্যে আতিশয্য নেই, Fickleness নেই, Sincerity শ্রদ্ধার ভাব তার মধ্যে ফুটে উঠেছে। একজন উচ্চশিক্ষিত cultured lady একটি পর্ণকুটিরের মধ্যে আমার সামনে এসে আমাকে প্রণাম করে উঠে বিনীতভাবে আমার দিকে দাঁড়িয়ে রইল, মাথায় হাত দিয়ে নীরবে তাকে আশীর্ব্বাদ করলাম..."।[৬০] রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে তার দেখা হও্য়ার ইতিবৃত্ত, রামকৃষ্ণের প্রতি তার শ্রদ্ধা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রীতিলতা প্রায় দুই ঘন্টার মতো মাষ্টারদার সাথে কথা বলেন। মাষ্টারদা আরো লিখেছেন “তার action করার আগ্রহ সে পরিষ্কার ভাবেই জানাল। বসে বসে যে মেয়েদের organise করা, organisation চালান প্রভৃতি কাজের দিকে তার প্রবৃত্তি নেই, ইচ্ছাও নেই বলে”। তিন দিন ধরে ধলঘাট গ্রামে সাবিত্রী দেবীর বাডিতে অবস্থানকালে আগ্নেয়াস্ত্র triggering এবং targeting এর উপর প্রীতিলতা প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন।
বিপ্লবী কর্মকান্ড
ধলঘাটে সংঘর্ষ
ধলঘাট সংঘর্ষের স্থানে নিহত বিপ্লবীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ।
## শহীদ মিনারের খুদাই করা অংশ।
পূর্ণেন্দু দস্তিদারের নির্মিত শহীদ মিনারের গায়ে মার্বেল পাথরের স্মৃতিফলক।
প্রীতিলতার স্মৃতিতে নির্মিত শহীদ মিনার।
## এই ছবিটি চট্টগ্রাম (বাংলাদেশ) এর পটিয়া থানার ধলঘাটে অবস্থিত ১৯৭০ সালে নির্মিত প্রীতিলতা ও অর্ধেন্দু দস্তিদার স্মরনে শহীদ মিনার এর স্থিরচিত্র । অর্ধেন্দু দস্তিদারের বড় ভাই পূর্ণেন্দু দস্তিদার এই শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এটি প্রীতিলতার জন্মস্থানের সন্মূখে নির্মাণ করা হয়। এই ছবিটি ধারন করার সময় শহীদ মিনারটিতে অবহেলা ও অযত্নের ছাপ স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।
১৯৩২ সাল--চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের দুই বছর অতিক্রম হয়ে গেল। ইতোমধ্যে বিপ্লবীদের অনেকেই নিহত এবং অনেকেই গেপ্তার হয়েছেন। এই বছরগুলোতে আক্রমণের নানা পরিকল্পনার পরেও শেষ পর্যন্ত বিপ্লবীরা নুতন কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারে নাই। এসব পরিকল্পনার মূলে ছিলেন মাষ্টারদা এবং নির্মল সেন। এই দুজন আত্মগোপণকারী বিপ্লবী তখনো গ্রাম থেকে গ্রামে বিভিন্ন আশ্রয়স্থলে ঘুরে ঘুরে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন।এই আশ্রয়স্থলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর টিনের ছাউনি দেয়া মাটির দোতলা বাড়িটা।পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামটা ছিল বিপ্লবীদের অতি শক্তিশালী গোপন আস্তানা। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন এবং জালালাবাদ যুদ্ধের পর থেকে এই গ্রামে ছিলো মিলিটারি ক্যাম্প। এই ক্যাম্প থেকে সেনারা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনরত বিপ্লবীদের ধরার চেষ্টা করত।[৬৩] সাবিত্রী দেবীর বাড়ি ছিল ঐ ক্যাম্প থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। বিপ্লবীদের কাছে ঐ বাড়ির গোপন নাম ছিল “আশ্রম”।[৬৪] বিধবা সাবিত্রী দেবী এক ছেলে এবং বিবাহিতা মেয়েকে নিয়ে ঐ বাড়িতে থাকতেন।[৬৩] বিপ্লবীদের কাছে তিনি ছিলেন “সাবিত্রী মাসিমা”।[৬২] এই আশ্রমে বসে সূর্য সেন এবং নির্মল সেন অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে সাক্ষাত করতেন এবং আলোচনা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতেন। অনেক সময় এই বাড়িতেই তাঁরা দেশ বিদেশের বিপ্লবীদের লেখা বই পড়ে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখে সময় কাটাতেন। ১৯৩২ সালের ১২ জুন তুমুল ঝড় বৃষ্টির দিনে মাষ্টারদার পাঠানো এক লোক প্রীতিলতাকে আশ্রমে নিয়ে আসেন।[৬৪] বাড়িতে প্রীতিলতা তাঁর মাকে সীতাকুন্ড যাবার কথা বলেন। মাষ্টারদা এবং নির্মল সেন ছাড়া ঐ বাড়িতে তখন ডিনামাইট ষড়যন্ত্র মামলার পলাতক আসামী তরুন বিপ্লবী অপূর্ব সেন (ভোলা) অবস্থান করছিলেন। ১৩ জুন সন্ধ্যায় সূর্য সেন এবং তাঁর সহযোগীদের সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে অবস্থানের কথা পটিয়া পুলিশ ক্যাম্প জানতে পারে। এর আগে মে মাসেই ইংরেজ প্রশাসন মাষ্টারদা এবং নির্মল সেনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরিয়ে দিতে পারলে ১০,০০০ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন। ক্যাম্পের অফিসার-ইন-চার্জ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন খবরটা জানার পর ঐ বাড়িতে অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পুরস্কার এবং পদোন্নতির আশা নিয়ে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন দুজন সাব-ইন্সপেক্টর, সাতজন সিপাহী, একজন হাবিলদার এবং দুজন কনষ্টেবল নিয়ে রাত প্রায় ৯টার দিকে ধলঘাটের ঐ বাড়িতে উপস্থিত হন।[৬৫] এর একটু আগেই মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতা দোতলা বাড়িটার নীচতলার রান্নাঘরে ভাত খেতে বসেছিলেন। জ্বরের কারণে নির্মল সেন এবং ভোলা রাতের খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে উপরের তলায় শুয়ে ছিলেন। মাষ্টারদার সাথে খেতে বসে অস্বস্তি বোধ করায় প্রীতিলতা দৌড়ে উপরে চলে যান। প্রীতিলতার লজ্জা দেখে নির্মল সেন খুব হেসেছিলেন।এমন সময় মাষ্টারদা ঘরের ভিতরের মই বেয়ে দোতলায় উঠে বলেন “নির্মলবাবু, পুলিশ এসেছে”। মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে নিচে নেমে এসে মেয়েদের সাথে থাকার নির্দেশ দেন। ততক্ষনে সিপাহী এবং কনষ্টেবলরা ঘর ঘিরে ফেলেছে। ক্যাপ্টেন ক্যামেরন এবং সাব-ইন্সপেক্টর মনোরঞ্জন বোস ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ঘরের একতলায় থাকা সাবিত্রী দেবী ও তাঁর ছেলে মেয়েকে দেখতে পান। “ঘরে আর কে আছে?” এ প্রশ্ন করে কোন উত্তর না পাওয়া অভিযান পরিচালনাকারীরা এসময় ঘরের উপরের তলায় পায়ের আওয়াজের শব্দ শুনতে পান।[৬৭] ক্যাপ্টেন ক্যামেরন হাতে রিভলবার নিয়ে ঘরের বাইরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিঁড়ির মাথায় পৌঁছে বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিতেই নির্মল সেনের করা দুইটা গুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন মৃত্যুবরন করেন। গুলির শব্দ পাওয়ার পরেই ঘরের চারিদিকে থাকা সৈন্যরা চারিদিক থেকে প্রচন্ড গুলিবর্ষণ শুরু করে। একটা গুলি এসে নির্মল সেনের বুকে লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরনে তাঁর মৃত্যু হয়। টাকা পয়সা এবং কাগজপত্র গুছিয়ে প্রীতিলতা এবং অপুর্ব সেনকে সঙ্গে নিয়ে মাষ্টারদা অন্ধকারে ঘরের বাইরে আসেন। এই সময়ে আমের শুকনো পাতায় পা পড়ার শব্দ পেয়ে আশেপাশে থাকা সিপাহীদের চালানো গুলিতে সবার আগে থাকা অপুর্ব সেন মারা যান। মাষ্টারদা আর প্রীতিলতা সেই রাতে কচুরিপানা ভরা পুকুরে সাঁতার কেটে আর কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে পটিয়ার কাশীয়াইশ গ্রামে দলের কর্মী সারোয়াতলী স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র মনিলাল দত্তের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছান।[৭২] মণিলাল ঐ বাড়ির গৃহশিক্ষক ছিলেন।[৭১] মাষ্টারদার জন্য রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত বিবরন লিখে ধলঘাটে এনেছিলেন প্রীতিলতা। সে পান্ডুলিপি পুকুরের মধ্যে হারিয়ে গেলো।[৭২] তাঁদেরকে নিরাপদ কোন আশ্রয়ে নিয়ে যেতে বলেন মাষ্টারদা। মণিলাল দত্ত তাদেরকে ধলঘাট হতে ছয় কিলোমিটার দূরে পাহাড়, জঙ্গল এবং নদীর কাছাকাছি একটা গ্রাম জৈষ্ট্যপুরায় নিয়ে যেতে মনস্থির করেন। পুলিশ আসলে পাহাড় এবং জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা যাবে অথবা নদী পার হয়ে অন্য আশ্রয়ে যাওয়া যাবে। অনেক প্রতিকূল পথ অতিক্রমের পর তাঁরা জৈষ্ট্যপুরা গ্রামে বিপ্লবীদের আরেকটা গোপন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছান।[৭২][৭৩] ঐ গুপ্ত আস্তানাটি বিপ্লবীদের কাছে “কুটির” নামে পরিচিত ছিল। ঐ কুটিরে তখন আত্মগোপণে ছিলেন সুশীল দে, কালীকিংকর দে এবং মহেন্দ্র চৌধুরী। সূর্য সেন পরের দিন প্রীতিলতাকে বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে সূর্য সেনের নির্দেশে মণিলাল প্রীতিলতার বাসায় পুলিশের নজরদারী আছে কিনা তা জানতে শহরে আসেন। “সব কিছু ঠিক আছে” জানার পর প্রীতিলতাকে বাড়ি গিয়ে স্কুল শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। "চট্টগ্রামে সৈন্য ও বিপ্লবীদের সংঘর্য" শিরোনামে ধলঘাট সংঘর্ষের খবরটা ১৫ জুন ১৯৩২ সালে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ঃ
"এইমাত্র সংবাদ আসিয়াছে যে, গতরাত্রে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার নিকটে বিপ্লবী ও সৈন্যদের এক সংঘর্য হইয়া গিয়াছে। ফলে গুর্খা বাহিনীর ক্যাপ্টেন ক্যামেরন ও দুইজন বিপ্লবী নিহত হইয়াছেন। বিপ্লবীদের নিকট দুইটি রিভলবার ও গুলি ইত্যাদি পাওয়া গিয়াছে। নিহত বিপ্লবীদের একজনকে নির্মল সেন বলিয়া সনাক্ত করা হইয়াছে।"
আত্মগোপন
ধলঘাট সংঘর্ষের সে রাতেই গোলাগুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরনের মৃত্যুর পর পুলিশের এস. আই মনোরঞ্জন বোস পটিয়ার মিলিটারী ক্যাম্পে গিয়ে আরো ত্রিশজন সৈন্য এবং একটা লুইস গান নিয়ে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে ফিরে আসেন। লুইস গানের গুলিবর্ষণে বাড়িটা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। সকালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও সেনাধ্যক্ষ মেজর গর্ডন দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। সাবিত্রী দেবী এবং তাঁর পুত্র কণ্যাকে বিপ্লবীদের আশ্রয় দেবার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। কণ্যা স্নেহলতার জবানবন্দিতে আরো তিন যুবক—দীনেশ দাশগুপ্ত, অজিত বিশ্বাস, এবং মনীন্দ্র দাশকে আটক করা হয়। পরবর্তীকালে সাবিত্রী দেবী, তাঁর পুত্র রামকৃষ্ণ, এবং এই তিন যুবককে বিপ্লবীদের আশ্রয় এবং সহায়তা করার দায়ে চার বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। ঘরের ভেতর চালানো তল্লাশীতে রিভলবার, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের দুইটা ছবি, পাশাপাশি দুইটা মেয়ের ছবি (যার মধ্যে একজন ছিল প্রীতিলতা) সহ কিছু চিঠি এবং দুইটা বইয়ের পান্ডুলিপি পাওয়া যায়।[৭৬] ধলঘাটে ছবি পাওয়ার পর ১৯ জুন পুলিশ বাসায় গিয়ে প্রীতিলতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।[৭৯] ২২ জুন এস.আই শৈলেন্দ্র সেনগুপ্ত এর নেতৃত্বে একটি দল ঐ বাড়িতে আরেক দফা তল্লাশি চালায়। তাঁর নির্দেশে আশে পাশের সব জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হয়। জঙ্গল এবং আশেপাশের পুকুরে তল্লাশীতে অনেক কাগজপত্র উদ্ধার করা হয় যা থেকে প্রমাণিত হয় চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের পর আত্মগোপনে থেকে ও বিপ্লবীরা তাঁদের আদর্শের সাথে অভিন্ন বিভিন্ন প্রবন্ধ পড়া এবং সামরিক প্রশিক্ষন চালিয়ে যাচ্ছিল। তল্লাশি অভিযানে কাজিন পরিচয় দিয়ে অমিতা দাশের (প্রীতিলতার) আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসির প্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে সাক্ষাতের হাতে লেখা একটা বিবরন পাওয়া যায়।[৮০][৮১] ঐ হাতের লেখার সাথে মেলানোর জন্য ৩০ জুন প্রীতিলতার বাসা থেকে পুলিশ তাঁর গানের একটা বই নিয়ে যায়। মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে আত্মগোপনের নির্দেশ দেন।[৭৯] ৫ জুলাই মনিলাল দত্ত এবং বীরেশ্বর রায়ের সাথে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে প্রীতিলতা আত্মগোপন করে। ছাত্রী পড়ানোর কথা বলে তিনি বাড়ি ত্যাগ করেছিলেন। পিতা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার অনেক খোঁজ খবর করেও কোন সন্ধান পাননি। ব্যর্থ হয়ে যখন থানায় খবরটা জানানো হল, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর যোগেন গুপ্ত আরেক নারী বিপ্লবী কল্পনা দত্তের বাড়িতে যান। কল্পনা দত্ত ঐ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন “আমাদের বাসায় এসে গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর বলেঃ এত শান্তশিষ্ট নম্র মেয়ে ও, এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, ভাবতেও পারি না তার ভিতর এত কিছু আছে! আমাদের খুব ফাঁকি দিয়ে সে পালিয়ে গেল।”[৮২] চট্টগ্রাম শহরের গোপন আস্তানায় কিছু দিন কাটিয়ে প্রীতিলতা পড়ৈকড়া গ্রামের রমণী চক্রবর্তীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বিপ্লবীদের আরেক গোপন আস্তানা এই বাড়িটার সাংকেতিক নাম ছিল “কুন্তলা”।[৮৩] এই বাড়িতে তখন আত্মগোপনে ছিলেন মাষ্টারদা এবং তারকেশ্বর দস্তিদার। প্রীতিলতার আত্মগোপনের খবর ১৩ জুলাই ১৯৩২ আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। “চট্টগ্রামের পলাতকা” শিরোনামের এই সংবাদে লেখা হয় “চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার ধলঘাটের শ্রীমতী প্রীতি ওয়াদ্দাদার গত ৫ই জুলাই, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শহর হইতে অন্তর্ধান করিয়াছেন। তাঁহার বয়স ১৯ বৎসর। পুলিশ তাঁহার সন্ধানের জন্য ব্যস্ত”।[৮৪] প্রীতিলতাকে ধরার জন্য বেঙ্গল পুলিশের সি আই ডি কর্তৃক প্রকাশিত ছবিসহ নোটিশটি ছিল নিম্নরূপঃ[৮৫]
"Waddadar, whose photographs are published above. Photograph No 1 was taken 2 years ago when Miss Prithi was a student of the Dacca Eden Intermediate College and photograph No. 2 (sitting postures), which is a more recent one, was found at the time of search of one Apurba Sen alias Bhola (since deceased), in connection with Dhalghat shooting affray at Chittagong.
A Special “look-out” should be kept for her and when traced, the I.B., C.I.D., Bengal, Calcutta, should be informed by wire. A close, though unobtrusive, surveillance should at the same time be kept on her movements.
Description—Miss Prithi Waddadar, daughter of Jagabandhu Waddadar (Baidya by caste), of Dhalghat, Patiya and Jamalkhana, Chittagong town: age 20/21 (looks younger than her age); dark; medium build; short; ugly in appearance."
ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ
তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব।
ইউরোপিয়ান ক্লাবের সম্মুখের স্মৃতিফলক।
১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ। কিন্তু গুড ফ্রাইডের কারণে সেদিনের ঐ পরিকল্পনা সফল করা যায়নি। চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে এই ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড় ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে প্রহরীদের অবস্থান ছিল। একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা ব্যতীত এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এদেশীয় কেউ ঐ ক্লাবের ধারে কাছে যেতে পারতো না।[৬৪] ক্লাবের সামনের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল “ডগ এন্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড”।[৮৬] সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাস করতো। আত্মগোপনকারী বিপ্লবীরা ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের জন্য নুতনভাবে পরিকল্পনা শুরু করে। চট্টগ্রাম শহরের কাছে দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে ঐ ক্লাবেরই একজন বেয়ারা যোগেশ মজুমদারের বাড়িতে বিপ্লবীরা আশ্রয় পেলেন।[৮৪] ১৯৩২ এর ১০ আগষ্ট ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দিন ধার্য করা হয়। শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সাতজনের একটা দল সেদিন ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর প্রতিজ্ঞা ছিল ক্লাব আক্রমণের কাজ শেষ হবার পর নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার যদি সুযোগ থাকে তবুও তিনি আত্মবিসর্জন দেবেন। তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। গভীর রাতে কাট্টলীর সমুদ্রসৈকতে তাঁর মৃতদেহ সমাহিত করা হয়।মাষ্টারদা ১৯৩২ এর সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাবে হামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই আক্রমণের দায়িত্ব তিনি নারী বিপ্লবীদের উপর দেবেন বলেন মনস্থির করেছিলেন। কিন্তু সাতদিন আগেই পুলিশের হাতে পুরুষবেশী কল্পনা দত্ত ধরা পরে গেলে আক্রমণে নেতৃত্বের ভার পড়ে একমাত্র নারী বিপ্লবী প্রীতিলতার উপর।[৭৯][৮৯] ২৩ সেপ্টেম্বর এ আক্রমণে প্রীতিলতার পরনে ছিল মালকোঁচা দেওয়া ধুতি আর পাঞ্জাবী, চুল ঢাকা দেবার জন্য মাথায় সাদা পাগড়ি, পায়ে রবার সোলের জুতা। ইউরোপীয় ক্লাবের পাশেই ছিল পাঞ্জাবীদের কোয়ার্টার। এর পাশ দিয়ে যেতে হবে বলেই প্রীতিলতাকে পাঞ্জাবী ছেলেদের মত পোশাক পড়ানো হয়েছিল। আক্রমণে অংশ নেয়া কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী পোষাক ছিল ধুতি আর শার্ট। লুঙ্গি আর শার্ট পরনে ছিল মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেন এর। বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার (বিপ্লবীদের দেয়া তাঁর গোপন নাম ছিল জয়দ্রথ) ক্লাবের ভিতর থেকে রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ এর দিকে আক্রমণের নিশানা দেখানোর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন ছিল শনিবার, প্রায় চল্লিশজন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করে। পূর্বদিকের গেট দিয়ে ওয়েবলি রিভলবার এবং বোমা নিয়ে আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা, শান্তি চক্রবর্তী আর কালীকিংকর দে। ওয়েবলি রিভলবার নিয়ে সুশীল দে আর মহেন্দ্র চৌধুরী ক্লাবের দক্ষিণের দরজা দিয়ে এবং ৯ ঘড়া পিস্তল নিয়ে বীরেশ্বর রায়, রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে পান্না সেন আর প্রফুল্ল দাস ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেবার পরেই ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে কেঁপে উঠছিল। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাবার কারণে সবাই অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে লাগল। ক্লাবে কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের কাছে রিভলবার ছিল। তাঁরা পাল্টা আক্রমণ করল। একজন মিলিটারী অফিসারের রিভলবারের গুলিতে প্রীতিলতার বাঁ-পাশে গুলির আঘাত লাগে। প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী দলটার সাথে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী সেদিনের এই আক্রমণে মিসেস সুলিভান নামে একজন নিহত হয় এবং চারজন পুরুষ এবং সাত জন মহিলা আহত হয়।
মৃত্যু এবং অতঃপর ইউরোপিয়ান ক্লাবের পাশের এই স্থানে প্রীতিলতা আত্মাহুতি দেন।
পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন। কালীকিংকর দে’র কাছে তিনি তাঁর রিভলবারটা দিয়ে আরো পটাশিয়াম সায়ানাইড চাইলে, কালীকিংকর তা প্রীতিলতার মুখের মধ্যে ঢেলে দেন।
বাংলা ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে: মায়ের কাছে প্রীতিলতার শেষ পত্র
ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে অংশ নেয়া অন্য বিপ্লবীদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রীতিলতা। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে বিপ্লবী শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই স্থান ত্যাগ করে। পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে পরবর্তীতে প্রীতিলতাকে সনাক্ত করেন। তাঁর মৃতদেহ তল্লাশীর পর বিপ্লবী লিফলেট, অপারেশনের পরিকল্পনা, বিভলবারের গুলি, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি এবং একটা হুইসেল পাওয়া যায়। ময়না তদন্তের পর জানা যায় গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ।
বেঙ্গল চিফ সেক্রেটারী প্রীতিলতার মৃত্যুর পর লন্ডনে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো একটা রিপোর্টে লেখেনঃ
"Pritilata had been closely associated with, if not actually the mistress of, the terrorist Biswas who was hanged for the murder of Inspector Tarini Mukherjee, and some reports indicate that she was the wife of Nirmal Sen who was killed while attempting to evade arrest of Dhalghat, where Captain Cameron fell."
প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের অবস্থা নিয়ে কল্পনা দত্ত লিখেছেনঃ “প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে'। তাঁদের দুঃখের পরিসীমা ছিল না, তবু তিনি সে দুঃখেকে দুঃখ মনে করেননি। ধাত্রীর কাজ নিয়ে তিনি সংসার চালিয়ে নিয়েছেন, আজো তাঁদের সেভাবে চলছে। প্রীতির বাবা প্রীতির দুঃখ ভুলতে পারেননি। আমাকে দেখলেই তাঁর প্রীতির কথা মনে পড়ে যায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন”।
কল্পনা দত্ত ১৯৩০ সালে প্রীতিলতার বাড়িতে এক আলাপচারিতা প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ “কথা হচ্ছিল, পাঁঠা কাটতে পারব কি না। আমি বলেছিলাম, ‘নিশ্চয় পারব, আমার মোটেই ভয় করে না’। প্রীতি উত্তর দিয়েছিল ‘ভয়ের প্রশ্ন না, কিন্তু আমি পারব না নিরীহ একটা জীবকে হত্যা করতে’। একজন তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করল ‘কী, দেশের স্বাধীনতার জন্যও তুমি অহিংস উপায়ে সংগ্রাম করতে চাও?’ আমার মনে পড়ে প্রীতির স্পষ্ট জবাব, ‘স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতেও পারব, প্রাণ নিতে মোটেই মায়া হবে না। কিন্তু নিরীহ জীব হত্যা করতে সত্যি মায়া হয়, পারব না।’”
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দের নামেও পরিচিত (জন্ম: মে ৫, ১৯১১; মৃত্যু সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৩২) ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার, একজন বাঙালী ছিলেন, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ ব্যক্তিত্ব। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন করেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন।এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো "কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ"। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তিতে পুলিশ তাদের আটক করে। পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড গলাধঃকরন করে আত্মহত্যা করেন।
প্রীতিলতার জন্মস্থানের ধ্বংসাবশেষ। ভিটা বাড়ীর কোন চিহ্নই আর অবশিষ্ট নেই।
শৈশব
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভাদেবী। তাঁদের ছয় সন্তানঃ মধুসূদন, প্রীতিলতা, কনকলতা, শান্তিলতা, আশালতা ও সন্তোষ। তাঁদের পরিবারের আদি পদবী ছিল দাশগুপ্ত। পরিবারের কোন এক পূর্বপুরুষ নবাবী আমলে “ওয়াহেদেদার” উপাধি পেয়েছিলেন, এই ওয়াহেদেদার থেকে ওয়াদ্দেদার বা ওয়াদ্দার। শৈশবে পিতার মৃত্যুর পর জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার তাঁর পৈতৃক বাড়ি ডেঙ্গাপাড়া সপরিবারে ত্যাগ করেন। তিনি পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হয়েছেন। এই বাড়িতেই প্রীতিলতার জন্ম হয়। আদর করে মা প্রতিভাদেবী তাঁকে “রাণী” ডাকতেন। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম শহরের আসকার খানের দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে টিনের ছাউনি দেয়া মাটির একটা দোতলা বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকতেন ওয়াদ্দেদার পরিবার। অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের প্রীতিলতা ছেলেবেলায় ঘর ঝাঁট দেওয়া, বাসন মাজা ইত্যাদি কাজে মা-কে সাহায্য করতেন।
শিক্ষাজীবন
প্রীতিলতার ম্যাট্রিকুলেশন পাশের সনদ।
ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ছিল প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৮ সালে তিনি এই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন।[১৪] প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য তিনি সব শিক্ষকের খুব প্রিয় ছিলেন। সেই শিক্ষকের একজন ছিলেন ইতিহাসের ঊষাদি। তিনি প্রীতিলতাকে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রানী লক্ষীবাই এর ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের ইতিহাস বলতেন। স্কুলে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিলেন কল্পনা দত্ত (পরবর্তীকালে বিপ্লবী)। এক ক্লাসের বড় প্রীতিলতা কল্পনার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতেন।তাঁদের স্বপ্নের কথা লিখেছেন কল্পনা দত্তঃ "কোন কোন সময় আমরা স্বপ্ন দেখতাম বড় বিজ্ঞানী হব। সেই সময়ে ঝাঁসীর রানী আমাদের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে। নিজেদেরকে আমরা অকুতোভয় বিপ্লবী হিসাবে দেখা শুরু করলাম।"স্কুলে আর্টস এবং সাহিত্য প্রীতিলতার প্রিয় বিষয় ছিলো।১৯২৬ সালে তিনি সংস্কৃত কলাপ পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। অঙ্কের নম্বর খারাপ ছিল বলে তিনি বৃত্তি পাননি।ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর বন্ধের সময় তিনি নাটক লিখেন এবং মেয়েরা সবাই মিলে সে নাটক চৌকি দিয়ে তৈরী মঞ্চে পরিবেশন করেন। পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ার সময়টাতে তাঁর বাড়িতে এক বিয়ের প্রস্তাব আসে। কিন্তু প্রীতিলতার প্রবল আপত্তির কারণে বিয়ের ব্যবস্থা তখনকার মতো স্থগিত হয়ে যায়।আই.এ. পড়ার জন্য তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজ়ের ছাত্রী নিবাসের মাসিক থাকা খাওয়ার খরচ ছিল ১০ টাকা এবং এর মধ্যে কলেজের বেতন ও হয়ে যেত। এ কারণেই অল্প বেতনের চাকুরে জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার মেয়েকে আই.এ. পড়তে ঢাকায় পাঠান। ১৯৩০ সালে আই.এ. পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করে। এই ফলাফলের জন্য তিনি মাসিক ২০ টাকার বৃত্তি পান এবং কলকাতার বেথুন কলেজ়ে বি এ পড়তে যান। বেথুন কলেজে মেয়েদের সাথে তাঁর আন্তরিক সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। বানারসী ঘোষ স্ট্রীটের হোস্টেলের ছাদে বসে প্রীতিলতার বাশীঁ বাজানো উপভোগ করত কলেজের মেয়েরা।প্রীতিলতার বি.এ. তে অন্যতম বিষয় ছিল দর্শন। দর্শনের পরীক্ষায় তিনি ক্লাসে সবার চাইতে ভাল ফলাফল লাভ করতেন। এই বিষয়ে তিনি অনার্স করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিপ্পবের সাথে যুক্ত হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে অনার্স পরীক্ষা তাঁর আর দেয়া হয়নি। ১৯৩২ সালে ডিসটিংশান নিয়ে তিনি বি.এ. পাশ করেন।কিন্তু, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় কৃতিত্বের সাথে স্নাতক পাস করলেও তিনি এবং তাঁর সঙ্গী বীণা দাসগুপ্তর পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখা হয়। অবশেষে তাঁদেরকে ২২ মার্চ, ২০১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয়।
Subscribe to:
Posts (Atom)